দেশে সম্প্রীতি নষ্ট করার ছোট ছোট যে ঘটনগুলো হয়ে থাকে, তার ৯৯ শতাংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়। সনাতন ধর্ম পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘শ্যামাপূজা ও দীপাবলী উৎসব-২০২৪ এ প্রধান অতিথির ভাষণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার এ কথা বলেন।
৩১ অক্টোবর ২০২৪ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে চবি মাননীয় উপাচার্য সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, জগতের সকল অন্ধকারকে পরাজিত করে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় আলোর প্রজ্জ্বলন ঘটানোর অভিপ্রায় নিয়ে আমাদের তরূণ-মেধাবী শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে দেশ-জাতির কল্যাণে নিজেদের আত্মনিয়োগ করবে এটাই প্রত্যাশিত। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের স্ব-স্ব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন ও চর্চার মাধ্যমে সুন্দর মনের পরিশীলিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে মাননীয় উপাচার্য আহবান জানান। তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক ধর্ম রয়েছে। কিন্তু সকল ধর্মের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ যা মানুষের নৈতিক মনোবলকে জাগ্রত করে। তিনি আরও বলেন, একজন গর্ভবতী মায়ের চিন্তাধারা তার সন্তানের উপর পড়ে। সেজন্য গর্ভবতী মায়েরা বেশি বেশি সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভে আগ্রহী থাকেন। এটা একটা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম হাতিয়ার। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সারা বাংলাদেশে আদিকাল থেকে বিরাজমান। বিভিন্ন স্বার্থে স্বার্থন্বেষী মহল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। পরস্পর মিলে মিশে থাকার মধ্যে শান্তি নিহিত রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়নি। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, একজন প্রকৃত মানুষ কোন দুর্নীতি করতে পারে না। কারণ অন্যায়, দুর্নীতি, ব্যভিচার ইত্যাদি নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য রয়েছে চরম শাস্তি। মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়র একাডেমিক ইমেজ ফিরিয়ে আনতে বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরিবার। মানুষের মাঝে নানা মতপার্থক্য থাকতে পারে, না হয় গণতন্ত্রের চর্চা কিভাবে হবে? আমরা একটি জায়গায় উন্নয়নের জন্য, সম্প্রীতির জন্য এক। এ সম্প্রীতি আমাদের বজায় রাখতে হবে। তিনি শ্যামাপূজা ও দীপাবলী উৎসবের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, প্রতিটি ধর্ম মানব কল্যাণের কথা বলে। ধর্ম মানুষকে শাশ্বত, সত্য ও সুন্দরের পথে আহ্বান করে। সকলেই যদি স্ব স্ব ধর্ম যথাযথভাবে পালন ও চর্চা করে, তাহলেই একটি সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রতিটি ধর্মের মূল লক্ষ্য মানবতার কল্যাণ। সে মানবতার কল্যাণ সাধনে ধর্মের নিয়ম নীতিগুলো ব্যক্তিগত জীবন, সমাজ জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারলেই জীবন সুন্দর ও সার্থক হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মনে করছি যে, বাংলাদেশে আগে যে জঞ্জাল ছিল, সে জঞ্জালকে পরিষ্কার করে ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব। তিনি আরও বলেন, আমরা জাতিগত ভেদাভেদ চাই না, আমরা চাই বাংলাদেশী মানুষ, আমরা চাই সুন্দর একটি উন্নয়নমূলক বাংলাদেশ, আমরা চাই বাংলাদেশের উন্নতি। এ উন্নতির ক্ষেত্রে আমরা যাতে সবাই একাকার হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারে, সেজন্য মাননীয় উপ-উপাচার্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। একই সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সনাতন ধর্ম পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়। সনাতন ধর্ম পরিষদ, চবি’র সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সজীব কুমার ঘোষ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাতন ধর্ম পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক (ছাত্র) প্রবীণ সেন।
দিনব্যাপি অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও দীপাবলী অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতী, আলোচনা, ভজন সঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় নৃত্যানুষ্ঠান, পূজা ও মহাপ্রসাদ বিতরণ। অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্ম পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


