পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে েপশুর হাট। ইতিমধ্যে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের আনাগোনায় সরগরম পশুর হাটগুলো। তবে গরুর দাম বেশি হওয়ায় এখনো অনেকে না কিনে দর কষাকষি করেই বাড়ি ফিরছেন। শেষ দিনের অপেক্ষা করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ গরু কিনেই ফিরছেন। বৃষ্টির কারণে অনেক বিক্রেতাই দাম ছেড়েছেন। এক্ষেত্রে ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি সবচেয়ে বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। আর বড় গরুর ক্রেতা নেই বলে জানান তারা। বিক্রেতাদের দাবি, বড় গরুর ক্ষেত্রে বেশির ভাগই দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। আজ বুধবার শেষ দিনের অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা।
হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর গরু-ছাগল উঠেছে। তবে এবারও যথারীতি মাঝারি গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। অধিকাংশ ক্রেতার অস্বস্তি কোরবানির পশুর চড়া দাম নিয়ে। কেউ কেউ আবার শেষ মুহূর্তে কেনার ঝুঁকি এড়াতে একটু বেশি দামে হলেও কিনে নিচ্ছেন পছন্দসই পশু। বিক্রেতাদের দাবি—পশুখাদ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে, গরু-ছাগলের নানা রোগবালাইয়ে ওষুধের পেছনেও খরচ বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে পশু লালন-পালনের ব্যয় মিটিয়ে এবছর তাদের খুব একটা লাভ হবে না।
গরু কিনতে এসেছেন হাজি আব্দুল হানিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘অসংখ্য পশু রয়েছে হাটে। তবে এবার দাম বাড়তি। তাই ক্রেতারা বাজেট অনুযায়ী ভালো মানের গরু কিনতে পারছেন না। যে গরুর দাম হওয়া উচিত ৮০ হাজার টাকা, বিক্রেতারা সেটার দাম হাঁকছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। গত কোরবানির ঈদের তুলনায় এবার পশুর দাম অনেক বেশি। একই আকারের গরু গতবারের চেয়ে এবার ৪০ হাজার টাকা বেশি দিয়েও কিনতে পারলাম না।’
তবে ক্রেতাদের এ ধরনের অভিযোগ মানতে নারাজ বিক্রেতারা। তারা বলছেন, গোখাদ্যের দাম বাড়ায় পশু পালনে তাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় গরু নিয়ে আসতে পরিবহন খরচও বেড়েছে। সে তুলনায় গরুর দাম তেমন বাড়েনি বলে মনে করছেন তারা। ব্যাপারীরা বলছেন, এ বছর কোরবানির পশু বিক্রি করে তারা আশানুরূপ লাভ পাবেন না।
হাটে ৫৫টি মাঝারি গরু নিয়ে এসেছেন। এরমধ্যে ২১টি বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি জানান, প্রতিটি গরু প্রত্যাশার থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাক ভাড়া করে গাবতলীর হাটে গরু নিয়ে এসেছি। কিন্তু ঢাকার ক্রেতারা কেনার মতো দাম বলছেন না। পশু পালনে খরচ কতটা বেড়েছে তা শুধু ব্যাপারী বা গৃহস্থরাই জানেন। আশা করছি, সবগুলো কোরবানির গরু ভালোভাবে বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে পারব।’
অন্যদিকে ঢাকায় পশু রাখার জায়গা কম থাকায় শেষ সময়ে পশু কিনবেন বলে জানান অনেকে। তাই শেষ সময়ে বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি হাটে তত্ত্বাবধানে রয়েছে সিটি করপোরেশন টিম। এছাড়া পুলিশ কন্ট্রোল রুম, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিভিন্ন টিম, পশুর স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম, জাল টাকা শনাক্তকরণ বুথ, বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যাংকিং সেবা এবং ইজারাদারদের হাসিল ঘর। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকাস্থ কোরবানির হাটের পশুর জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২২টি টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. এস এম নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা কোরবানির হাটে আগত পশুর স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। মোবাইল ভেটেরিনারি সেবার মাধ্যমে পুরো হাটের যে কোনো পশুর সমস্যা তাত্ক্ষণিকভাবে গিয়ে সমাধান করছি, চিকিৎসা দিচ্ছি। কোরবানির পশু সুস্থ কিনা, সেসব তথ্য দিয়ে ক্রেতাদের সহায়তা করছি। কোনো বিক্রেতা যাতে প্রতারণার আশ্রয় নিতে না পারে সেজন্য আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট প্রাণিসেবা দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।’


