ইসরাইলের নৃশংস হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও। শুক্রবার তারা অ্যাম্বুলেন্সের এক বহরে বোমা হামলা করে কমপক্ষে ১৫ জনকে হত্যা করেছে। এরপর বুক ফুলিয়ে এ খবরকে নিশ্চিত করেছে। কোনো প্রমাণ না দিয়ে তারা বলেছে হামাসের যোদ্ধাদের টার্গেট করে ওই হামলা চালানো হয়েছে। বাস্তুচ্যুত সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন একটি স্কুলে। তাদেরকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল গাজার দক্ষিণে। কিন্তু এমন সময়ে সেখানেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সে হামলায় ভীতি প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আল-শিফা হাসপাতালের বাইরে অ্যাম্বুলেন্সের বহরে হামলার খবরে আমি আতঙ্কিত।
হাসপাতালের বাইরে রাস্তায় মৃতদেহগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার চিত্র ভীতিকর। এই যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, এই হামলার পর অ্যাম্বুলেন্সের চারপাশে মৃতদেহ এবং আহতদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। চারপাশ তখন রক্তে ভিজে যাচ্ছে। আহতদের আর্ত চিৎকারে আকাশবাতাস ভারি হচ্ছিল। দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করেন কিছু মানুষ।
ওদিকে শুক্রবার ইসরাইল সফর শেষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সেখানে তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের এবং বিরোধী দলীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দাবি জানান মানবিক কারণে যুদ্ধে বিরতি দিতে। সেখান থেকে আজ শনিবার তার জর্ডান যাওয়ার কথা। জর্ডানে বেশ কিছু আরব নেতার সঙ্গে তার সামিট হওয়ার কথা রয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
এখন পর্যন্তু ইসরাইলের নৃশংসতায় কমপক্ষে ৯২২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলে নিহত হয়েছে ১৪০০ মানুষ। গাজায় স্থল অভিযানে ইসরাইলের কমপক্ষে ২৪ সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। গাজাকে ইসরাইলি সেনারা চারপাশ থেকে ঘিরে ফেললেও হামাসের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধারা যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে। তারা ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্য করে কৌশলী হামলা চালাচ্ছে। ইসরাইলি চলন্ত ট্যাংকে তাদেরকে বোমা পেতে তা বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখা গেছে।
গাজায় বার্তা সংস্থা এএফপির ব্যুরো অফিস ইসরাইলি হামলায় বড় রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে হাজি বিল্ডিংয়ে তাদের অফিস। ইসরাইলি হামলায় সেই ভবনে এএফপির ব্যুরো অফিসের দেয়ালে বিরাট বড় এক গর্তের ছবি প্রকাশ হয়েছে ৩রা নভেম্বর। ওই হামলা সত্ত্বেও গাজা সিটিতে ইসরাইলের অভিযান নিয়ে কোনো বিঘ্ন ছাড়াই সরাসরি সম্প্রচার করছে তারা।
এএফপির অফিসে হামলা হয় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে। তা সরাসরি সম্প্রচারে ধারণ করেন এএফপির একজন ক্যামেরাম্যান। একজন সংবাদকর্মীর মতে, একটি বোমা অফিসের টেকনিক্যাল সাইডে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবেশ করে। এতে বেশ ক্ষতি হয়। এতে অফিসের একটি দেয়াল নষ্ট হয়। সংযুক্ত কক্ষ ও বিভিন্ন দরজার মারাত্মক ক্ষতি হয়। ভবনের ছাদের ওপর যে পানির ট্যাংক আছে তা ফেটে যায়। এ হামলার দায় প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র। তারা বলেছে, ওই ভবনে ইসরাইলি সেনাবাহিনী কোনো হামলা চালায়নি। অন্যদিকে হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন এএফপির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ফ্যাব্রিক ফ্রাইস।
শুক্রবার দিবাগত রাতে দখলীকৃত পশ্চিমতীরে অব্যাহতভাবে হামলা চালাচ্ছিল ইসরাইলি সেনারা। বিশেষ করে ভোরে নাবলুস, জেনিন, হেব্রন এবং বেথলেহেমে হামলা হয়। এতে আকাশ থেকে বোমা হামলা বৃদ্ধি করা হয়। ফলে গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩৫ জন ফিলিস্তিনি। গাজায়ও তারা রাতভর হামলা অব্যাহত রেখেছে। এ থেকে বেসামরিক লোকজনেরও রক্ষা নেই। ফিলিস্তিনি সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা’র মতে, গাজার পশ্চিমাঞ্চলে আল নাসের, জাবালিয়া, বেইত হানুন, আতাত্রা, আল সুদানিয়া এবং বেইত লাহিয়ায় আকাশপথে হামলা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালের কাছে আরও একবার হামলা হয়েছে। নুসেইরাত এবং বুরেইজ শরণার্থী ক্যাম্পের আবাসিক ভবনে হামলা হয়েছে। হামলা চালানো হয়েছে গাজার দক্ষিণে খান ইউনূসে।


