শফিউল আলম, রাউজানঃ প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের প্রজনন মৌসুম চলছে । প্রবল বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলের শ্রোতের পানি এসে নদীতে শ্রোত সৃষ্টি হলে, অমবস্যা পুর্ণিমার তীথিতে যে কোন সময়ে মা মাছ ডিম ছাড়বে হালদায় । হালদা নদীতে প্রতি বৎসর এই মৌসুমে রুই, কাতালা মৃগেল, কালিবাউস মাছ ডিম ছাড়ে। হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পর নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম থেকে রেনু ফুটানের জন্য নির্মান করা হ্যচারীগুলোর মধ্যে রাউজান পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম গহিরা, কাগতিয়ায় নির্মান করা হ্যচারী গত কয়েক বৎসর ধরে অকোজো হয়ে পড়েছে ।
সরজমিনে পরিদর্শন কালে দেখা যায় পশ্চিম গহিরায় নির্মান করা হ্যচারীর বাইরে সীমানা প্রাচির কয়েকটি অংশে ধসে পড়েছে। হ্যচারীর মধ্যে পাকা কুয়া গুলোর মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে । হ্যচারীর জন্য রাখা মালামাল নেই। কাগতিয়া হ্যচারীর ভেতরের পাকা কুয়া ফাটল দিয়েছে। হ্র্যচারীর উপরে চালার টিন নেই অনেকাংশে। হ্যচারীতে ডিম ফুটানোর জন্য রাখা মালামাল নেই । কাগতিয়া এলাকার ডিম সংগ্রহকারী নুরুল আলম বলেন, কাগতিয়া হ্যচারীটি নির্মানের পর এক বৎসর হ্যচারীতে ডিম ফুটানো হয় । এরপর থেকে হ্যচারীটি অকোজো হয়ে গেলে ও মেরামত ও পুনঃনির্মানের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি । হ্যচারীর চালার টিন দরজা, সরঞ্জাম অরক্ষিত অবস্থায় অকোজো হয়ে পড়ে থাকায় চালার টিন দরজা, সরঞ্জাম নিয়ে যায় দুবৃত্তরা ।
অকোজে হয়ে পড়ে থাকা কাগতিয়া হ্যচারীটিতে রাতেই দূবৃত্ত ও মাদক ব্যবসায়ী মাদক সেবনকারীদের নিরাপদ আস্তানা । সন্দ্বার পর থেকে হ্যচারী এলাকার আশে পাশে দুবৃত্ত ও মাদক ব্যবসায়ীদের ভয়ে সাধারন মানুষ যাতায়াত করেন। প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা রক্ষা প্রকল্পের আওতায় নির্মান করা দুটি হ্যচারী অকোজো হয়ে রয়েছে গত কয়েক বৎসর ধরে। রাউজানের দক্ষিন গহিরা মোবারক খীল এলাকায় নির্মান করা হ্যচারী, রাউজানের পশ্চিম বিনাজুরী এলাকায় আই, ডি, এফের একটি হ্যচারী, হাটহাজারীর মদুনাঘাট, মাছুয়াঘোনা, নয়াহাট এলাকায় ৫টি হ্যচারী সচল রয়েছে । হালদা নদীতে প্রতি বৎসর চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত সময়ে মা মাছ ডিম ছাড়ে । বর্তমানে হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুশ চলছে । রাউজানের পশ্চিম আবুল খীল এলাকার বাসিন্দ্বা ডিম সংগ্রহকারী সনজিৎ বড়ুয়া বলেন, হালদা নদীতে মা মাছের আনা গোনা বেড়েছে । মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে হালদা নদীর মোহনা থেকে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা ও উপজেলা মৎস অধিদপ্তর, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন,নৌপুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে নদীতে নিষোধাজ্ঞা অমান্য করে জাল বসিয়ে মাছ শিকার করার সময়ে বিপুল পরিমাণ জাল উদ্বার করেন ।
মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে হালদা নদীর বিভিন্ন এলাকায় নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্দ্ব করার জন্য নির্দেশনা দিলেও হালদা নদীর মোহনা থেকে শুরু করে কচুখাইন, মোকামী পাড়া, দেওয়ানজি ঘাট, সার্কদা, উরকিরচর, পশ্চিম আবুর খীল, নাপিতের ঘাট, মগদাই সুইস গেইট, কাগতিয়া, পশ্চিম বিনাজুরী, সিপাহির ঘাট, পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, বদুর ঘোনা, কোতয়ালী ঘোনা, কাজী পাড়া, ইন্দিরা ঘাট, পশ্চিম ফতেহ নগর, হাটহাজারীর লাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী, উত্তর মেখল, গড়দুয়ারা আমতোয়া, বাড়ীঘোনা, মার্দ্রাসা, দক্ষিন মার্দ্রাসা এলাকায় প্রতিদিন নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে বালুখোকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা ।
প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়লে ডিম সংগ্রহকারীর নৌকা নিয়ে জাল বসিয়ে নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে। ডিম সংগ্রহ করার পর হ্যচারীতে ও নদীর তীরে খনন করা মাটির কুয়ায় ডিম রেখে ডিম থেকে রেনু ফুটানো হয় । রেনু ফুটানোর পর দেশের বিভিন্ন এলাকা চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মৎস খামারী, মৎস চাষী, মৎস প্রকল্পের মালিকরা এসে হালদার মা মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত রেনু ক্রয় করে নিয়ে যায় । হালদা মা মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত রেনু পুকুর জলাশয়, দীঘি, মৎস প্রকল্পে, মৎস হ্যচারীতে অবমুক্ত করেন। হালদা নদীর মা মাছের রেনু থেকে পোনা উৎপাাদন করে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী ও হ্যচারীর মালিকরা মাছ চাষীদের বিক্রয় করেন। হালদা নদীর মা মাছের ডিম থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদিত হয় দেশে ।
এ ব্যাপারে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার বলেন, দুটি হ্যচারী অকোজো হয়ে গেছে । অকোজো হয়ে পড়ে থাকা হ্যচারী পুনঃনির্মান করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে । রাউজানের মোবারকখীল ও পশ্চিম বিনাজুরী, হাটহজারীর মদুনাঘাট, মাছুয়া ঘোনা, এলাকায় হ্যচারীগুলো সচল রয়েছে । হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে নদীতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান মাছ ধরার জাল উদ্বার করা হয়েছে । নদীতে রাউজান উপজেলা প্রশাসন, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন, মৎস অধিদপ্তর, নৌপুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে ।


