নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এবং গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার জন্য গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রতিচ্ছবি ছিল, যারা নায়ক ছিল, নেতা ছিল এবং যারা অংশগ্রহণকারী তাদেরকে টার্গেট করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আজকের এই দিনে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধপন্থি লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার যারা স্বাধীনতাকামী ব্যক্তি ছিলেন তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলাদেশের যারা চিন্তাশীল মানুষ ছিলেন। স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন তাদেরকে হত্যা করা হয় যাতে বাংলাদেশ জাতি হিসেবে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে না পারে। ৫৪ বছরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আকাঙক্ষাকে বাস্তবায়ন করার জন্য লড়াই সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে। ২৪ এর বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে সেই লড়াই আত্মত্যাগ আবারও করতে হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি লড়াইয়ে বুদ্ধিজীবীদের একটি শ্রেণি নিজে যেমন পক্ষে ছিল আবার অপর শ্রেণি বিপক্ষে ছিল। এই আওয়ামী লীগের সময়েও আওয়ামীপন্থি কিছু বুদ্ধিজীবী তারা বিভিন্ন নামে আওয়ামী লীগের মতদর্শ উৎপাদন করে গিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদের পক্ষে সন্মতি তৈরি করেছে। আমরা ৫ আগস্টের পরেও এই সময়েও সেটি দেখতে পাচ্ছি। বুদ্ধিজীবীর নাম করে ৫ আগস্টের বিরুদ্ধে জুলাই এর বিপক্ষে এবং গণহত্যার পক্ষে সম্মতি তৈরি করে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি জনগণের পক্ষের বুদ্ধিজীবীরা সবসময় ছিলেন তারা আছেন, তারা কথা বলবেন এবং দেশের যে চিন্তার স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা সেই স্বাধীনতার লড়াই ছাড়া আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অপূর্ণ। আমরাই বুদ্ধিজীবী দিবসে যাতে সেই সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমরা ধারণ করতে চাই তাদের আকাঙক্ষাকে, আমরা চাই এই সময়ের রাজনীতিবিদ বুদ্ধিজীবীরা সেই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ৭১, ২৪ এবং ৪৭ এর আমাদের যে ঐতিহাসিক লড়াই ছিল সেই লড়াইকে ধারণ করে বাংলাদেশকে একটা আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততোই মনে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে সেই দিক থেকে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আশ্বস্ত করতে পারছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বলেছি যে জননিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের দুর্বলতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলার জায়গায় মানুষের সেই আস্থাটা এখনো আসেনি। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এবং গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার জন্য গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রতিচ্ছবি, যারা নায়ক ছিল, নেতা ছিল এবং যারা অংশগ্রহণকারী ছিল তাদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। ওসমান হাদির ওপরে হামলার ঘটনা পুরো জাতি দেখেছে। ওসমান হাদিকে যারা হত্যা চেষ্টায় লিপ্ত ছিল তাদের কিন্তু এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আমরা বলতে চাই অতি দ্রুত সময়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই পরিকল্পনা এবং আয়োজনের সঙ্গে যারা জড়িত প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের ভেতরে বাইরে যারা নীলনকশা করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেফতারের আওতায় আনতে হবে এবং আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করছে। আমরা মনে করে এই সময়ে আমাদেরকে এই জায়গা থেকে সরে এসে একটা ন্যূনতম জাতীয় ঐক্য রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে বিভক্ত থাকলে ফ্যাসিস্ট শক্তি সবচেয়ে বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হবে। ফলে আমরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে গণতন্ত্রের যে যাত্রা সেই যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চাই।
এসময় দলটির অন্যন্য নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।


