বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজটি ভিড়েছে বাংলাদেশর একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দরে। মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে এসেছে জাহাজটি।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভেড়ে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ ‘অউসো মারু’। ইন্দোনেশিয়ার তারাহান থেকে কয়লা নিয়ে সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে এই বৃহদাকার জাহাজটি। চট্টগ্রাম বন্দর ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- ২২৯ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১২ মিটার ড্রাফটের (পানিতে নিমজ্জিত অংশের গভীরতা) জাহাজটি সোমবার মাতারবাড়ী উপকূলে এসে পৌঁছায়।
দেশের প্রথম এবং একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় জাহাজটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভেড়ানো হয় বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) নির্বাহী পরিচালক (প্রকল্প) আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, ‘অউসো মারু’ জাহাজটির ধারণ ক্ষমতা ৮০ হাজার মেট্রিক টন। তবে জাহাজটি মোট ৬৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এসেছে। ‘অউসো মারু ’ নামের এই জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করতে ছয়-সাতদিন সময় লাগতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এর থেকেও বড় জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে।
মাতারবাড়িতে এই ঐতিহাসিক ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান এম আবু হায়দার বলেন- সত্যিই এটি একটি ঐতিহাসিক ও বড় অবদান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের।
দেশের ইতিহাসে এই প্রথম এত বিশাল আকৃতির জাহাজ আমাদের দেশের বন্দরে ভিড়লো।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ‘মাতারবাড়ি চ্যানেলে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটিতে ইতোমধ্যে আমরা ১২০টির বেশি জাহাজের বার্থিং করেছি।’
তিনি বলেন-আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ মাতারবাড়ির কয়লা জেটিতে ভিড়ছে। মাতারবাড়ি টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ডিপ ড্রাফট ভেসেল তথা ১৬ মিটার বা তার চেয়ে বেশি গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ আসা-যাওয়া করতে পারবে।’
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রথম জেটিটি নির্মাণ শেষে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘এমভি ভেনাস ট্রায়াম্প’ প্রথম সেখানে ভিড়েছিল।
এরপর মাতারবাড়িতে আসা জাহাজগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে এসেছিল। দেশের প্রথম এবং একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য ‘মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য ৩৫০ মিটার প্রশস্তও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন করে ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেল নির্মাণ করা হয়েছে। অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পাশে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পাশে ৬৭০ মিটার ঢেউ নিরোধক বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে হয়েছে।
সেখানে ৪৬০ মিটার কন্টেইনার জেটি এবং ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি এবং কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ সব বন্দর সুবিধা থাকবে। এসব কাজের মধ্যে জুলাই নাগাদ জেটি ও কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ শুরু করার আশা রয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নে ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নিয়ে ১২০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এই কেন্দ্রের কয়লা আমদানির জন্য জেটি নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছিল সেখানে। পরে সেটিই গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে রূপ নেয়।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পণ্যবাহী জাহাজ মাতারবাড়িতে বন্দরে ভিড়ার পরপরই অভ্যর্থনা জানালেন-
কক্সবাজার-২,(মহেশখালী-কুতুবদিয়ার)সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক’সহ সংশ্লিষ্টজন।