শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে ‘ইন্ডিয়ান ওশিন রিজিয়নের’ (আইওআর) ত্রি-পক্ষীয় সংলাপে মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এএনএম মুনিরুজ্জামান বলেছেন, বিশ্ব রাজনৈতিক অর্থনীতির জন্য ইন্ডিয়ান ওশান রিজিয়নের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। ৩০শে এপ্রিল ওই সংলাপের একজন প্যানেল বক্তা ছিলেন তিনি। মিডিয়ার খবরে বলা হয়- প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করেছে ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক রুট। এ জন্য এই মহাসাগর গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব ইতিহাস এবং অর্থনীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এ অঞ্চল। এর অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর থাকার কারণে, ভারত মহাসাগর আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বড় রকম ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক হটস্পট হয়ে উঠেছে ভারত মহাসাগর। এর গুরুত্ব আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্য দুটি দেশ মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার সঙ্গে এ অঞ্চলের নৌ সহযোগিতা নিয়ে ট্র্যাক-২ সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই সংলাপের প্রথম দফা অনুষ্ঠিত হয় রোববার শ্রীলংকার কলম্বোতে। বিআইপিএসএস শ্রীলংকার থিংক ট্যাংক ‘ফ্যাকটাম’ এবং মালদ্বীপের থিংক ট্যাংক ‘বানি সেন্টার’-এর সঙ্গে এই ত্রি-পক্ষীয় সংলাপ আয়োজন করে।
এটা হচ্ছে সামুদ্রিক ইস্যুতে একটি স্থায়ী ত্রিপক্ষীয় ফোরাম। সামুদ্রিক সহযোগিতা বিষয়ক এই প্যানেলের সভাপতিত্ব করেন বন্দরনায়েকে ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাটিক ট্রেইনিং ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক পামেলা জয়াসেকারা ডিন। সংলাপে প্যানেল বক্তারা হলেন বিআইপিএসএসের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল এএনএম মুনিরুজ্জামান, রিয়ার এডমিরাল (অবসরপ্রাপ্ত) ওয়াই এন জয়ারত্নে এবং বানি সেন্টারের চেয়ারপারসন তোরিক হামিদ। প্যানেলে ভারত মহাসাগরের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরেন মেজর জেনারেল মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ইন্ডিয়ান ওশান রিজিয়ন বা আইওআর দিয়ে বিশ্ব তেল বাণিজ্যের শতকরা কমপক্ষে ৮০ ভাগ সরবরাহ করা হয়। তাই বিশ্ব রাজনৈতিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে এই সামুদ্রিক লাইনের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বাভাস বলে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরীয় অর্থনীতি হবে বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় এক পঞ্চমাংশ। এরই মধ্যে এখানে মাথাপিছু জিডিপি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত মহাসাগর প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এখানে আছে তেল ও গ্যাসের রিজার্ভ, খনিজ এবং মাছের বিশাল মজুদ। বিশ্বের মোট অফসোর তেল উৎপাদন এখানে প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ আছে শতকরা ২৫ ভাগ।
বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য কৌশলগত দিক দিয়ে ভারত মহাসাগর গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলটি জলদস্যু, সন্ত্রাস এবং অন্যান্য নিরাপত্তামূলক হুমকিপ্রবণ। এর মধ্যে আছে বিরাষ্ট্রীয় অ্যাক্টর ও বিদ্রোহী গ্রুপগুলো। নিজেদের স্বার্থ এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় এ অঞ্চলের অনেক দেশই নৌ সক্ষমতায় বড় অংকের বিনিয়োগ করেছে। বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার এক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভারত মহাসাগর। এসব দেশের মধ্যে আছে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান। তারা এরই মধ্যে প্রভাব বিস্তার করছে। কৌশলগত রিসোর্সের সুবিধা চাইছে।
বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া সহ কমপক্ষে ৩০ টি দেশ নিয়ে গড়ে উঠেছে আইওআর। যখন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় সব আলোচনাই এ অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি এবং মেরিটাইম সিল্ক রুটের দিকে যাচ্ছে, তখন উপকূলীয় আইওআরভুক্ত দেশগুলোকে অন্তর্নিহিত এবং সুপ্ত অপ্রথাগত নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা করতে হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন হলো এই গ্রহের বড় পরিবেশগত উদ্বেগের কারণ। একই সঙ্গে এক্ষেত্রে সমুদ্রবিষয়ক উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি এলার্মিং আইওআরভুক্তদের জন্য।
প্যানেল বক্তারা বলেন, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেহেতু ভারত মহাসাগর বিশ্বের তৃতীয় সর্ববৃহৎ সাগর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট, তাই ভারত মহাসাগর অর্থনীতি এবং কৌশলগত স্বার্থের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সবার জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।