একটি পরিবারের কাছে কমপক্ষে ৫৬ বছর জিম্মি থাকার পর আফ্রিকার দেশ গ্যাবনে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। বুধবার দেশটির সেনাবাহিনী সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, প্রেসিডেন্ট আলি বোঙ্গো অনডিম্বাকে গৃহবন্দি করেছে। এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন গ্যাবোনিজ রিপাবলিকান গার্ডের কমান্ডার ইন চিফ ব্রাইস ক্লোথায়ার ওলিগুই নগুয়েমা। তার সঙ্গে আছে প্রেসিডেন্ট বোঙ্গোর একজন কাজিন। দেশটার অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেছেন ব্রাইস ক্লোথায়ার ওলিগুই নগুয়েমা। তিনি বর্তমানে দেশে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও রহস্যময় ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি একজন সেনা কর্মকর্তার ছেলে। মরক্কোর রয়েল মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বোঙ্গোর আগে তার পিতা ওমর বোঙ্গোর রিপাবলিকান গার্ডের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
ওমর বোঙ্গো ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৬৭ সালে। ২০০৯ সালে তিনি মারা যান। এরপর ক্ষমতায় আসে তার ছেলে আলি বোঙ্গো অনডিম্বা। এরপর থেকে তিনিই ক্ষমতায় আছেন। ২৬ শে আগস্ট দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন হয়। তাতে তৃতীয় মেয়াদের জন্য লড়াই করেন আলি বোঙ্গো অনডিম্বা। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নির্বাচন কমিশন ফল ঘোষণা করে। এতে দেখা যায়, তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন আলি বোঙ্গো। সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের ফল বাতিল করে অভ্যুত্থান ঘটান ব্রাইস ক্লোথায়ার ওলিগুই নগুয়েমা। তিনি গ্যাবনের একজন উদ্যোক্তা ও মিলিয়নার। যুক্তরাষ্ট্রে বোঙ্গো পরিবারের সম্পদের বিষয়ে ২০২০ সালে তদন্ত করে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট। তাতে দেখা যায় ব্রাইস ক্লোথায়ার ওলিগুই নগুয়েমাও যুক্তরাষ্ট্রে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করেছেন। ওই তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেরিল্যান্ডে মধ্যম ও কর্মজীবী মানুষের বসবাস এমন এলাকায় ২০১৫ ও ২০১৮ সালে তিনটি বাড়ি কিনেছেন তিনি। এসব বিষয়ে ব্রাইস ক্লোথায়ার ওলিগুই নগুয়েমাকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এসব ব্যক্তিগত বিষয়। আমি মনে করি ফ্রান্স বা যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের প্রাইভেট লাইফকে সম্মান দেখানো হয়। বুধবার ফরাসি পত্রিকা লা মন্ডে’তে ব্রাইস ক্লোথায়ার ওলিগুই নগুয়েমার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি বলেছেন, ২০১৮ সালের অক্টোবরে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন আলি বোঙ্গো। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ নিয়ে সবাই কথা বলেছেন। কিন্তু কেউই দায়িত্ব নিতে চান না। তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের অধিকার প্রেসিডেন্টের নেই। সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। যে নির্বাচন হয়েছে তা মোটেও ভাল ছিল না। তাই সেনাবাহিনী পরিস্থিতি উল্টে দেয়ার চেষ্টা করেছে। দায়িত্ব নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আলি বোঙ্গো অবসরে যেতে পারেন। গ্যাবনের অন্য নাগরিকদের মতোই তিনি সব অধিকার ভোগ করছেন।
এর আগের খবরে বলা হয়, তেল উৎপাদনকারী দেশ গ্যাবনে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে সেনাবাহিনী। তারা প্রেসিডেন্ট আলি বোঙ্গাকে গৃহবন্দি করার ঘোষণা দিয়েছে। তৃতীয় দফায় দেশটির নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ফল ঘোষণায় দেখা যায় প্রেসিডেন্ট তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। এরপরই মঙ্গলবার দিবাগত রাতভর টেলিভিশনে নির্বাচনের ফল বাতিল ঘোষণা করেন এক ডজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তারা সীমান্ত বন্ধ করে দেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তারা জানান, গ্যাবনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সবার প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মঙ্গলবার রাতভর এ ঘোষণা দেয়ার পর বুধবার সকাল হতেই রাজধানী লিব্রেভিলের রাস্তায় নেমে সেনাদের সমর্থন করে অভ্যুত্থান উদযাপন করেন শত শত মানুষ। অন্যদিকে জাতীয় টেলিভিশনে আরেক ঘোষণায় সেনা কর্মকর্তারা বলেন, তারা প্রেসিডেন্ট বোঙ্গোকে আটক করেছেন। ১৯৬৭ সাল থেকে গ্যাবন শাসন করছিলেন তার পিতা ওমর। তার কাছ থেকে ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেন বোঙ্গো। তারপর তিনি ক্ষমতায় অক্ষত আছেন। বিরোধীদের অভিযোগ এই পরিবারটি তেল ও খনিজ সমৃদ্ধ দেশটির এসব সম্পদ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই করেনি।
যদি এই অভ্যুত্থান সফল হয় তাহলে ২০২০ সাল থেকে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় এটা হবে ৮ম অভ্যুত্থান। এর আগে সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে জুলাইয়ে, নাইজারে। এছাড়া মালি, গিনি, বুরকিনা ফাসো, চাদের ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। এবার গ্যাবনে অভ্যুত্থানকারীরা নিজেদেরকে কমিটি অব ট্রানজিশন অ্যান্ড দ্য রিস্টোরেশন অব ইনস্টিটিউশনের সদস্য বলে বর্ণনা করেছে। বলেছে, গ্যাবন মারাত্মকভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ২৬ শে আগস্ট যে নির্বাচন হয়েছে তা স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না।
প্রেসিডেন্ট বোঙ্গোকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিবৃতি ঘোষণার পর রাজধানী লিব্রেভিলে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে পরে তা শান্ত হয়ে আসে। এ বিষয়ে গ্যাবন সরকারের তরফ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


