শওকত হোসেন করিম ,ফটিকছড়ি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ভোটের মাঠে লড়ছেন ৯ প্রার্থী। তবে দ্বিমুখী লড়াইয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্ধীতা হতে পারে বলে এমনটি জানাচ্ছেন ভোটাররা। আলোচনায় রয়েছেন আরো দুই প্রার্থী। নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি নৌকা,বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের (বিটিএফ)সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ফুলের মালা,স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোঃ আবু তৈয়ব তরমুজ,বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির (বিএসপি)শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ একতারা,ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মীর মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম চেয়ার,বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ হামিদ উল্লাহ্ মোমবাতি,জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শফিউল আজম চৌধুরী লাঙ্গল,স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান ঈগল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় ফুলকপি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে ৯ প্রার্থী থাকলেও ভোটাররা হিসাব-নিকাশ কষছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মুহাম্মদ হুসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়বকে নিয়ে। দুজনের মধ্যে মূলত লড়াই হবে বলে ভোটাররা মত প্রকাশ করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনিও এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা। বর্তমান আমেরিকা প্রবাসী। তিন প্রার্থী মাঠে গণসংযোগের পাশাপাশি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে টানার রীতিমত প্রতিযোগিতা করছেন। নিজ দলের তিন প্রার্থীকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছেন কর্মী সমর্থকরাও। আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ারের কন্যা। খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে ২০১৪ সালে নৌকা প্রতীক দেওয়া হলেও জোটের কারনে নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। ফলে খাদিজাতুল আনোয়ার সনির আর নির্বাচন করা হয়নি। তবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ফটিকছড়ির মানুষের জন্য নিজের পিতার অবদান ও ভালবাসার কথা তু্লে ধরে ভোট কামনা করছেন। তিনি বলেন, আমার প্রয়াত বাবাও এই ফটিকছড়ির আসনের এমপি ছিলেন। ফটিকছড়ির মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলেন। আমার বাবার মতো আমিও এলাকাবাসীর পাশে আছি। আমি নৌকা পাওয়ার জন্য এলাকাবাসী নামাজ পড়েছেন রোজা রেখেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া পূর্ন করেছেন। জনগন আমাকে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন বলে আশা করছি। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা হুসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব গত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। সাংসদ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর সাথেও ছিল সখ্যতা। আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থকদের একটি অংশ তাঁর সাথে আছেন। সব মিলিয় শক্ত অবস্থানে আছেন তিনি। এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভাগ্য খুলতে পারে বলে অনেক মত প্রকাশ করেন। হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন,ছাত্রজীবন থেকেই আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করছি। দল থেকে সুযোগ দিয়েছে বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। ভোটাররা আমাকে উপজেলা নির্বাচনের মতো ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে আমি আশাবাদি। আলোচনায় আছেন দুই ভাণ্ডারীঃ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির (বিএসপি)চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী দু’জনই উপমহাদেশের আধ্যাত্বিক কেন্দ্র মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের আউলাদ। সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। দুজনই সুফি ও সুন্নি মতাদর্শী তরিকার পরিচিত মুখ। সারাদেশের মতো ফটিকছড়িতেও দুইজনের ভক্ত মুরিদ রয়েছে। চাচা সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও ভাতিজা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী দুই দলের দুই প্রধান একই আসনে নির্বাচন করছেন বলে ভক্ত-মুরিদরাও দ্বিধাদ্বন্ধে রয়েছে। শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী গত নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এবার নির্বাচন করছেন নিজ দলের প্রতীক একতারা নিয়ে। নির্বাচন পূর্বে দেশের বিভিন্ন সভা সমাবেশ, প্রধানমন্ত্রীও ওবায়দুল কাদেরের সাথে বৈটক করেছেন তিনি। ২৭ ডিসেম্বরও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। নৌকা প্রতীকে তিনিই নির্বাচন করবেন বা তাঁকে সমর্থন দেওয়া হবে এমন আলোচনা ছিল সর্বত্রই। তিনি প্রচার প্রচারণায় সাড়া ফেলছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী। তিনি ফটিকছড়ির উন্নয়নের রূপরেখাও প্রকাশ করেন। সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে দলবদল করে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। একই বছরের ১২ জুনের নির্বাচনে ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের কাছে পরাজিত হন তিনি। পরবর্তী তিনি বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। আওয়ামীলীগের শরীক দল হিসেবে গত দুইবারের (২০১৪ ও ২০১৮) সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। দ্বাদশ নির্বাচনেও নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে পারেন বলে যথেষ্ট আলোচনায় ছিলেন তিনি। শেষমেষ নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় নিজ দলের প্রতীক ফুলের মালা নিয়ে নির্বাচন করেছেন। অতিত নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে তিনি কৌশলী লড়তে পারেন এমনটি হিসাবও ভোটাররা করছেন। আওয়ামীলীগের সমর্থন ও নৌকা প্রতীক না পাওয়া নিয়ে তিনি তাঁর প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে জানান। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেতে এবং দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের বিজয়ের চেয়ে শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হোক, সেটাই মুখ্য চাওয়া বলে মন্তব্য করেছেন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি এমপি থাকাকালীন ফটিকছড়ির যথেষ্ট উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন।
ফটিকছড়িতে চলছে নানা সমীকরণ
সংবাদটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন
একটি মন্তব্য করুন