বন্দর পতেঙ্গা আসনে নৌকার পক্ষে বিশাল শো ডাউন দেখা গেল শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর)। বিকেল ৩টা থেকেই হালিশহর বেগমজান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আসতে থাকে একের পর এক মিছিল।
ছেলেদের মিছিলের পাশাপাশি একই রঙের শাড়ি পরা শত শত নারীর মিছিল নজর কাড়ছিল সবার। তাদের বুকে নৌকা প্রতীক, মুখে দীপ্ত স্লোগান।
দেখতে দেখতে কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাঠটি।
স্লোগানের পাশাপাশি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী যত গান। সেই গানের তালে তালে নেচে গেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন তরুণ-যুবকরা। সিএনজি অটোরিকশায় ঢোল বাজিয়ে সুর করে নৌকার পক্ষে দুই তরুণের গান এলাকাবাসীকে মুগ্ধ করেছে।
আসর নামাজের পরপরই নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নিতে আসেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ। এ সময় তিনি বলেন, আমার জয়ের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ বলবেন, যারা ভোটার। আমি দেখছি মানুষ খুব উৎসাহী। মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখছি। মানুষের শঙ্কা কাটানোর জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ রয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবে। সমাজে যারা মাস্তান, চাঁদাবাজ, খুনি তাদের বিতাড়ন করা গেলে দেশে ভোটে মানুষের ঢল নামবে, ভোট বিপ্লব হবে। ভোটে মানুষের আস্থা সৃষ্টি করার জন্য সব বাহিনী নেমেছে, নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু একটি এলাকায় একশ’সন্ত্রাসী থাকে। ওই একশ সন্ত্রাসী চলে গেলে এক লাখ মানুষের মনে স্বস্তি আসবে।
তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পিছিয়ে থাকা একটি দেশকে কীভাবে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করলো বিশ্ববাসীর সামনে তা বড় বিস্ময়ের। অভূতপূর্ব এক জাদু। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বের মানচিত্রে নব পরিচয়ের আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশের ক্যারিশম্যাটিক নির্মাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার গঠনের লক্ষ্যে নৌকায় ভোট দিন।
তিনি বলেন, বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক চলমান প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে শেখ হাসিনা অনিবার্য এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন টেকসই করেছেন বলেই বিশ্বের ক্ষমতাধর মোড়লদের চোখে চোখ রেখে তিনি বাংলাদেশের হয়ে কথা বলতে পারছেন। এমন চৌকস, মেধাবী, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্র নায়কের হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। তাই সব মতভেদ, দলীয় মতপার্থক্য ভুলে আসুন নৌকায় ভোট দিই।
চটগ্রাম উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার আসনে আউটার রিং রোড, শহর রক্ষা বাঁধ, ফ্লাইওভার, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, বে টার্মিনাল ও চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন বানাতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করেছেন রোমাঞ্চকর বঙ্গবন্ধু টানেল। যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক জোন হিসেবে কোরিয়ান ইপিজেডে বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এতো যুগান্তকারী উন্নয়নের কৃতজ্ঞতা জানাতে সারাদেশে শেখ হাসিনার সব প্রার্থীকে নৌকায় ভোট দিন।
গণসংযোগকালে বিশাল মিছিলটি বেগমজান উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে শুরু করে সল্টগোলা রেল ক্রসিং, ইপিজেড, কলসি দীঘির পাড় প্রদক্ষিণ করে মেহের আফজাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আসে। এ সময় এম আবদুল লতিফ হাত নেড়ে সড়কের দুই পাশের মানুষকে সালাম জানান এবং ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুল হক মিয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর জালাল উদ্দীন ইকবাল, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, নগর যুবলীগের সহ-সভাপতি দেবাশীষ পাল দেবুসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং স্বাধীনতা নারী শক্তি’র নেতাকর্মীরা।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেলের পতেঙ্গা প্রান্ত, গুপ্তখালের জ্বালানি তৈলাধার, ইস্টার্ন রিফাইনারি, দুই বড় ইপিজেড, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, বিএসসি ও বিপিসির প্রধান কার্যালয়সহ বেশ কিছু বেসরকারি কনটেইনার ডিপো, বে টার্মিনাল, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকাসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের কারণে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সংসদীয় আসন। বলা হয়ে থাকে এখানকার ইপিজেডগুলোতে দেশের সব জেলা-উপজেলার মানুষ কাজ করেন। এখানকার একটি ওয়ার্ডে অনেক সংসদীয় আসনের চেয়ে বেশি ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বন্দর-পতেঙ্গা আসনে এবার সাত জন প্রার্থী থাকলেও স্থানীয় ভোটাররা মনে করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চসিকের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের সঙ্গে ভোটযুদ্ধ হবে এম আবদুল লতিফের।