ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত হয়ে অন্তত ৫৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ২৩৩.৬৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৫৬ হাজার ৫শত ৬৭টি পরিবারে ১ লক্ষ ৮০ হাজার জনগোষ্ঠী নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। এ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নাজিরপুর উপজেলার প্রায় ৪০ হাজার কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ২৬ মে রোববার থেকে দক্ষিণ উপকূলে কখনো ভারী, কখনো মাঝারি টানা বর্ষণ হয়। দক্ষিণাঞ্চলের নাজিরপুর এলাকায় আউশ (বীজতলা ও আবাদসহ), চীনাবাদাম, মরিচ, মুগ, তিল, শাকসবজি, পাট, পান, কলা, আম, লিচু, মাল্টা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল রয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মধ্যে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক পরিবারের সংখ্যাই বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ রেমাল ও অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলার সমস্ত এলাকা প্লাবিত হয়ে ৫৮ কোটি টকার সম্পদের ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিস সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ১শত ৩৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে পুকুর, দিঘি ও ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এতে মৎস্যবিষয়ক সম্পদের মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৭ কোটি ৯০ কোটি টাকা। গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হাঁস, মুরগী খামার রয়েছে প্রায় ৫ হাজারটি। ঝড়ের পানিতে প্লাবিত হয়ে ভেসে ও মারা যাওয়ায় প্রাণিসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ ৭ কোটি ১০ লক্ষ ৯ হাজার টাকা। মোট সড়ক রয়েছে ৩৫০ কিমি, ব্রিজ ১ হাজার ৫২টি, কালভার্ট রয়েছে ২ শতটি। এলজিইডি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে ক্ষতির পরিমাণ ১৮ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। পাকা , আধাপাকা, কাঁচা মোট ৪০ হাজার ৫ শত ৯টি ঘর রয়েছে যার মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ২ শত ৫৩টি এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৭শত ১৪টি।
ঘরবাড়ির ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে ১ হাজার ২ শত কিমি। ক্ষতি হয়েছে ৪০ কিমি। বিদ্যুৎখাতে ক্ষতির পরিমাণ ২০ লক্ষ টাকা। প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১শত ৮২টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৪টি, কলেজ রয়েছে ৮টি, মাদ্রাসা রয়েছে ১২টি। যার মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি কলেজ ও ৫টি মাদ্রাসা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ ৬৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। মসজিদ রয়েছে ১শত ৮৬টি, মন্দির রয়েছে ২ শত ৪০টি। ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদের সংখ্যা ৫টি এবং মন্দিরের সংখ্যা ২০টি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। গভীর নলকূপ রয়েছে ২ হাজার ২৬টি এবং অগভীর নলকূপ রয়েছে ২ হাজার ৩১টি। ক্ষাতগ্রস্ত নলকূপের সংখ্যা গভীর ৩৫টি ও অগভীর ১ শত ৩০টি। জনস্বাস্থ্য বিভাগে ক্ষতির পরিমাণ ৪৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। বনাঞ্চল রয়েছে ১ শত ৫০ হেক্টর, বনায়ন ৫ শত হেক্টর, নার্সারি ৬ শত হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে। বন বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ ৫৯ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগে ক্ষতি হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইস্রাফিল হোসেন।