গত বছর (২০২৩ সালে) দেশে রেকর্ড চা উৎপাদন হয়েছে। প্রথমবারের মত চা উৎপাদন ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। দেশের চা বাগানগুলোতে উৎপাদন হয়েছে ১০২ দশমিক ৯১৮ মিলিয়ন কেজি বা ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি চা। গত বছরের শুরু থেকে চা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চা বাগানগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছে চা বোর্ড। এর পাশাপাশি বৃষ্টির পরিমাণও ছিল পরিমিত। সবমিলে অনুকূল আবহাওয়া, চা বোর্ডের টেকনিক্যাল সাপোর্ট, সমতল অঞ্চলে চা উৎপাদন, পুরাতন বাগান সম্প্রসারণ এবং চা শ্রমিকদের উৎসাহ প্রদানের কারণে রেকর্ড সংখ্যক চা উৎপাদন হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে চা উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি। ২০২২ সালে দেশে চা উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি। ২০২৩ সালে উৎপাদন হয়েছে ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি। এছাড়া, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার কেজি চা।
অন্যদিকে, গত দুই বছরের তুলনায় চা রপ্তানি বেড়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার কেজি। ২০২১ সালে চা রপ্তানি করা হয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার কেজি। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি। গত বছর চা রপ্তানি করা হয়েছে ১০ লাখ ৪ হাজার কেজি। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়মিত মনিটরিং এবং বাগান মালিক ও শ্রমিকদের নিরলস প্রচেষ্টায় চা রপ্তানি বৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও, বিশ্বে চা শিল্পের নতুন বাজার সৃষ্টি করে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে চা বোর্ড। চায়ের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে মানসম্মত চা উৎপাদনসহ উৎপাদন মূল্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সিটি গ্রুপের বাঁশখালীর চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানের ব্যবস্থাপক এবং বাংলাদেশ চা সংসদ চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান আবুল বাশার জানান, ২০২৩ সালে চা উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে প্রয়োজনমত বৃষ্টি। চা বাগানে যদি প্রয়োজনের সময় বৃষ্টি না হয় তাহলে চা উৎপাদন কমে যাবে। একইভাবে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলে পাতা নষ্ট হয়ে যাবে। গতবছর পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। ফলে রেকর্ড সংখ্যক উৎপাদন হয়েছে। এছাড়াও, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চা বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং দিকনির্দেশনা ছিল।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রথমবারের মত আমাদের দেশে চা উৎপাদন ১০ কোটি কেজি ছাড়িয়েছে। এই উৎপাদন বৃদ্ধির পিছনে বিভিন্ন কারণ ছিল। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চা বাগান মালিকদের আমরা টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছি। অর্থাৎ সার, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছি। পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়াও সমতল ভূমিতে চা উৎপাদনে উৎসাহ দেয়া, পুরাতন বাগানগুলোকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা। এছাড়া, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং শ্রমিকদের মজুুরি বৃদ্ধির ফলে তারা উৎসাহ নিয়ে কাজ করার ফলে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।