ইরানের রাজধানী তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই খবর জানিয়েছে।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরসিজি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসমাইল হানিয়া যে ভবনে অবস্থান করছিলেন সেখানে তিনি এবং তার একজন দেহরক্ষী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হানিয়েহ তেহরানে অবসস্থান করছিলেন।
হানিয়েহকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল সে সম্পর্কে কোনও বিশদ বিবরণ দেয়নি আইআরজিসি, তারা বলেছে হামলার তদন্ত চলছে।
হানিয়ার মৃত্যুতে হামাস এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে বলেছে, তেহরানে বিশ্বাসঘাতক জায়নবাদীদের হামলায় ভাই, নেতা, শহীদ, আন্দোলনের প্রধান মুজাহিদ ইসমাইল হানিয়াহ মৃত্যুতে ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ হামাস আমাদের মহান ফিলিস্তিনি জনগণ, আরব ও ইসলামি জাতি এবং বিশ্বের সমস্ত মুক্ত মানুষের কাছে শোক প্রকাশ করছি।
হানিয়া ২০১৯ সালে গাজা ছেড়ে কাতারে বসবাস শুরু করেছিলেন। বর্তমানে গাজার শীর্ষস্থানীয় হামাস নেতা হলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
এই হত্যাকাণ্ডটি গাজার জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ তারা আশা করেছিল হানিয়া আলোচনার মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করবেন।
……………………………….হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানে নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা শাসন করা গোষ্ঠীটির পাশাপাশি ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস পৃথক বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে।
ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি ইসরায়েলের ওপর এ হত্যাকাণ্ডের দায় চাপিয়ে এ ঘটনাকে মারাত্মক উত্তেজনাবৃদ্ধি বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, হামাস একটি ধারণা, একটি প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো ব্যক্তি নয়। ত্যাগ স্বীকার না করে হামাস তার পথেই চলবে এবং আমরা বিজয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।
ইসরায়েলের ঐতিহ্যমন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহু বলেছেন, নোংরা পৃথিবীকে পরিষ্কার করার এটাই সঠিক উপায়। আর কোন কাল্পনিক শান্তি কিংবা সমর্পণ চুক্তি নয়। আর কোনো করুণা নেই। হানিয়ার মৃত্যু পৃথিবীকে আরও একটু সুন্দর করে তুলেছে।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ ঘটনাকে তিনি কাপুরুষোচিত কাজ এবং একটি বিপজ্জনক পরিবর্তন বলে আখ্যা দিয়েছেন। বার্তাসংস্থা ওয়াফা এমনটি জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং ইসরায়েলি দখলদারত্বের মুখে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি অবিচল থাকার আহ্বান জানান।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বগদানভ বলেন, এটি নিশ্চিতভাবেই অগ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এটি আরও উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে।
ইয়েমেনের হুতি সুপ্রিম রেভল্যুশনারি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলি আল-হুতি বলছেন, ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা একটি জঘন্য সন্ত্রাসী অপরাধ এবং এটি আইন ও আদর্শ মূল্যবোধের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হামাস নেতার রক্ত বৃথা যাবে না।
ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যু এবং বৈরুতে হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে ইসরায়েলের হত্যার দাবির বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি মনে করি না যুদ্ধ অনিবার্য। কূটনীতির জন্য সবসময় জায়গা এবং সুযোগ রয়েছে।
যে হামলায় হানিয়া নিহত হয়েছেন, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে অস্টিন বলেন, দেওয়ার মতো আর কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, হানিয়ার হত্যাকাণ্ড আবারও প্রমাণ করে যে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারের শান্তি অর্জনের কোনো ইচ্ছা নেই। বার্তা সংস্থা আনাদোলু এমনটি জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলকে থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো পদক্ষেপ না নিলে এ অঞ্চলে আরও বড় সংঘাত দেখা দেবে।
হামাস বলছে, মঙ্গলবার ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করা হয়। রাজধানী তেহরানে তার বাসস্থানে জায়নবাদী গুপ্ত হামলায় তিনি নিহত হন।