আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ। তিনি একজন সাহিত্যিক, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা এবং প্রাচীন বাংলা পুঁথির সংগ্রাহক ও ব্যাখ্যাকার। তিনি ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ অক্টোবর বৃহত্তর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদন্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আবদুল করিম ১৮৯৩ সালে পটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কয়েকটি স্কুলে শিক্ষকতা করার পর তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে চাকরি গ্রহণ করেন এবং শেষ পর্যন্ত বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শক পদে উন্নীত হন। ১৯৩৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
প্রথম জীবনেই তিনি সাহিত্যবিষয়ক নিবন্ধ রচনা শুরু করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম তৎকালীন বিদগ্ধ সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করে। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহের বিষয়। সারাজীবন তিনি প্রাচীন বাংলা পান্ডুলিপি (পুঁথি) সংগ্রহ করেন। ১৯২০-২১ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ তাঁর রচিত বাংলা পুঁথির তালিকা বাঙালা প্রাচীন পুথির বিবরণ শিরোনামে দুখন্ডে প্রকাশ করে। তাঁর সংগৃহীত পুঁথির বেশির ভাগ মুসলমান কবিদের লেখা এবং ঐগুলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে। হিন্দু কবিদের লেখা অবশিষ্ট পুঁথিগুলি রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরকে দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত পান্ডুলিপিগুলির একটি সুবিন্যস্ত তালিকা পুঁথি পরিচিতি শিরোনামে প্রকাশ করেছে।
আবদুল করিম এগারোটি প্রাচীন বাংলা গ্রন্থ সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। ইসলামাবাদ শিরোনামে তিনি চট্টগ্রামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি গ্রন্থও রচনা করেন। ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক এর সঙ্গে যৌথভাবে তিনি আরাকান রাজসভায় বাঙ্গালা সাহিত্য শীর্ষক আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন। এ সবই পান্ডিত্যপূর্ণ রচনা। তাঁর সংগৃহীত মুসলমান কবিদের রচিত পান্ডুলিপিগুলি থেকে জানা যায় যে, সেকালের মুসলিম মনীষীরা বাংলা সাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। দৌলত কাজী, আলাওল, সৈয়দ সুলতান, মুহম্মদ খান প্রমুখ শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবিদের অন্যতম বলে গণ্য। যাঁদের নাম ও রচনা সম্পর্কে আগে কিছুই জানা যায়নি এমন প্রায় একশ জন মুসলমান কবিকে তিনি সাধারণ্যে পরিচিত করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলা মুসলমানদেরও ভাষা ছিল।
নদীয়া সাহিত্য সভা তাঁকে ‘সাহিত্যসাগর’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে এবং চট্টল ধর্মমন্ডলী তাঁকে ‘সাহিত্য বিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি বরাবরই শেষোক্ত খেতাবটি পছন্দ করতেন এবং নিজ নামের সঙ্গে তা ব্যবহার করতেন।
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।