সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও: কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বিগত এক বছরে তার আজ্ঞাবহদের নিয়ে বিদায়ক্ষনে ভুরিভোজের আয়োজন উপজেলার জুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিগত তিন দিন পূর্বে সদ্য বদলির আদেশ পাওয়া ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা গত বৃহস্পতিবার তার বাসায় একটি ভুরি ভোজের আয়োজন করে। ভাড়া বাসার সামনের খালি আঙিনায় সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে রাতের আধাঁরে এ আয়োজন করেন। যাতে আগতদের বিভিন্ন আইটেমের দামি খাবার পরিবেশন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ আলোচিত ভুরিভোজে উপস্থিতিদের মধ্যে সিংহভাগছিল উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। যাদের অধিকাংশ বিগত এক বছরে তার বৈধ-অবৈধ নানা নির্দেশনা নিরবে পালন করে গেছেন। আর এ আয়োজনকে জমাতে থানা প্রশাসনের ওসিসহ একাধিক কর্মকর্তা ও কতিপয় জনপ্রতিনিধিদেরও উপস্থিতির দেখা মিলেছে।
তবে বিদায়ী আওয়ামী দোসর ইউএনও সুবল চাকমা মনো কষ্টে ছিলেন,তার বিগত একবছরের কর্মস্থল ঈদগাঁও উপজেলার পতিত আওয়ামী সরকারের আওয়ামীলীগ,ছাত্রলীগ,যুবলীগসহ তাদের দোসর আওয়ামী সন্ত্রাসী ও দালালদের তার নানা অনৈতিক কর্মের দোসরদের সমালোচনার ভয়ে ভুরিভোজে তীব্র সমালোচনা ও চাপের কারণে আমন্ত্রণ জানাতে পারেনি।
মূলত এ আয়োজনের মাধ্যমে সে নিজেকে জনবান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করে ক্লিন ইমেজ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিদায় নিয়ে উর্ধতন প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিল তার মুখ্য উদ্দেশ্য। গোপন এ আয়োজনের সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সচেতন মহলে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। এ আয়োজনেও তিনি তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল উপজেলা প্রশাসন থেকে দেয়া বিভিন্ন সুবিধা ভোগির কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে এ আয়োজন করে বলে সুত্রে উঠে এসেছে। অবৈধ আওয়ামী দোসর সুবিধা ভোগিরা উপস্থিত অন্যদের রোষানলে পড়ার ভয়ে ভূরিভোজনে উপস্থিত না হলেও নব্য কিছু দালাল ও চিহ্নিত কতিপয় সুবিধাভোগি টিকই উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ ভূরিভোজনের সংবাদ প্রকাশ হলে অসংখ্য লোককে বিগত এক বছরে উপজেলার অভিভাবক হিসেবে ইউএনও সুবল চাকমার ভুমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুনা যায়, তাদের দাবি নতুন উপজেলা ঈদগাঁওতে পুর্ণাঙ্গ ইউএনও হিসেবে সুবল চাকমাকে পদায়নের পর জনগণ আশা করেছিল উপজেলার উন্নয়নে ও জনগণের কল্যাণে তিনি ভুমিকা রাখবেন। কিন্তু যোগদানের পর থেকে জনগণের পরিবর্তে পতিত আওয়ামী সরকারের দোসরদের সাথে আতাঁতের সম্পর্ক গড়ে তুলেন তিনি। তাদের মাধ্যমে উপজেলার সরকারী-বেসরকারি সব কমিটি-সমিতিতে তাকে অনৈক সুবিধা অর্জনে সুযোগ করে দেয়া আওয়ামী দোসরদের স্থান করে দিয়ে উপজেলা কার্যালয়কে অঘোষিত আওয়ামী কার্যালয়ে পরিণত করেন।
তার যোগদানের শুরু থেকেই অবৈধ দখলে যেতে শুরু করে ঈদগাঁও মাছ বাজারের শত বছরের সরকার কতৃক ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় করা মাছ বাজারের পুর্বাংশ। রাতারাতি জায়গাটা ব্যাক্তি মালিকানাধীন দাবি করে বহুতল অবৈধ ভবন নির্মাণ কাজ একটি চক্র এখনও অব্যাহত রাখলেও রহস্যময় কারণে কোন ব্যবস্থা নেননি।
বাজার ব্যবসায়ীদের দাবি এ নিয়ে কোটি টাকার লেনদেন হতে পারে। এরপর প্রতিনিয়ত ঈদগাঁও উপজেলা কেন্দ্রীক বৈধ-অবৈধ বালি মহাল ইজারার দখল বেদখল নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্য, ঈদগাঁও’র পাহাড়ি বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রকাশ্যে মায়ানমারের অবৈধ গরু পাচার এবং গরু বাজার ইজারাদার রমজান কতৃক টোকেন দিয়ে অবৈধ গরু বৈধ করণ, প্রকাশ্যে মহাসড়কের পাশে অবৈধ গরুর আড়ত স্থাপন, উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ অর্ধ ডজন ইটভাটা,মুজিব বর্ষের ঘর বরাদ্দ, নলকূপ,ওয়াশরুম,বাজারের জনচলাচলের ফুটপাতে ভাসমান শতশত দোকান স্থাপন, অবৈধ হাসপাতাল,ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেননি। সরকারি বিভিন্ন দিবসের আয়োজনে সরকার কতৃক বরাদ্দ থাকলেও কৌশলে তা বাস্তবায়নের নামে আওয়ামী দালাল চক্রের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও উপরোক্ত অপরাধ চক্রের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়।
সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনে বিগত ৪ আগস্ট আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে প্রকাশ্যে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার উপর হামলায় অংশ নেন এ আওয়ামী দোসর ইউএনও সুবল চাকমা। যার স্থির চিত্র ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তখন। ওই ঘটনায় ইউএনও’র সরকারি গাড়ি অন্যান্য গাড়ির সাথে সংঘর্ষকালে পুড়ে গেলেও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রক্ষায় বিগত তিন মাসেও তিনি মামলা করেননি। আওয়ামী সরকার পতন পরবর্তী বিশেষ আদেশে উপজেলার সরকারি -বেসরকারি বিভিন্ন কমিটি -সমিতি ভেঙে দিয়ে নতুন অস্থায়ী আহবায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশনা সরকার দিলেও আওয়ামী সরকার পতনের মনোকষ্টে অদ্যাবধি কোন কমিটি গঠনের প্রয়োজন অনুভব করেননি তিনি।
বরং পূর্বের ভেঙে দেয়া কমিটির কতিপয় আওয়ামী দোসরদের নিয়ে গোপনে কার্যক্রম চালাতে থাকে।এমনকি সরকার পতন পরবর্তী সময়ে যে বন্যা হয়েছে, তাতে সরকার যে ত্রাণ ও অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে তাও গোপনে পূর্বের আওয়ামী দোসরদের নির্দেশনামত বাস্তবায়ন করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সবশেষে ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সভাপতির দায়ীত্বে থাকলেও পুরাতন ও নতুন দালাল চক্রের যোগসাজশে বিগত ৩/৪ মাসেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেননি প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায়। বরং তদন্তের নামে সময় ক্ষেপন করে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাড় করিয়েছেন বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসন থেকে জেলার বিভিন্ন বালি মহালের ইজারা তালিকা প্রকাশ করা হলেও তাতে বাদ পড়েছে ঈদগাঁও উপজেলার বালি মহাল গুলো। অভিযোগ আছে ইতিপূর্বে যারা বালি মহালগুলো ইজারা নিয়েছিল,তাদের বালি উত্তোলন ও সরবরাহে সোনালি সিন্ডিকেট নামে আওয়ামী প্রেতাত্মারা উপজেলা প্রশাসনের আতাঁতে বাঁধা সৃষ্টি করে। এতে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়। যার কারণে ঈদগাঁও নদী ও কালির ছড়ার বালি মহাল আসন্ন জেলা প্রশাসনের ইজারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, আইনি মারপ্যাঁচ ফেলে কালিরছড়া বালি মহালটি উক্ত আওয়ামী দোসর ইউএনও সুবল চাকমা পুনরায় মোটা অংকের বিনিময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুনরায় চিহ্নিত আওয়ামী দোসরদের ইজারার সময় বৃদ্ধি করে দেয়।
অন্যদিকে ঈদগাঁও নদীর বিশাল বালি মহালটিও কৌশলে আইনি গ্যাড়াকলে ফেলে বিরোধীয় আওয়ামী দোসরদের কাছ থেকে মোটা অংকের সুবিধা হাতিয়ে নিয়ে তা থেকে নতুন রাজস্ব পাওয়া থেকে সরকারকে বিরত রেখেছে। এক কথায় বদলি আদেশ পরবর্তী নতুন কর্মস্থল ফেনীর ছাগল নাইয়ায় যোগদানের পূর্বক্ষণেও তিনি আওয়ামী দোসরদের হাতে এ বালিমহাল তুলে দিয়ে আখের গোছানোর ধান্ধায় আছেন। এক কথায় বিগত এক বছরে এ আওয়ামী দোসর ইউএনও সুবল চাকমা ঈদগাঁওবাসীর উন্নয়নে কোন কাজই করেননি। বরং নিরবে -নিবৃতিতে আওয়ামী দোসর ও দালাল চক্রকে ব্যবহার করে আখের গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তাই তারা অবিলম্বে বদলি নয়,তদন্ত পূর্বক এ কর্মকর্তাকে ওএসডি করতে উর্ধতন প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।