দিনে থাকে খননযন্ত্র ভেকু, দেখা, মেলে না মাটি খেকো’র
শফিউল আলম, রাউজান ঃ চট্টগ্রামের রাউজানে সন্ধ্যা হলেই প্রতিযোগিতা চলে পাহাড়-টিলা কাটার। এসব পাহাড়-টিলা কাটা মাটি দিয়ে ভরাট করছে কৃষি জমি। মাটি খেকোদের রাতভর উৎপাতে অসহায় উপজেলা প্রশাসন। সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ভেকু দিয়ে নির্বিচারে পাহাড় টিলা কাটার ফলে সমতল ভূমিতে পরিণত হচ্ছে উপজেলার কদলপুর, রাউজান ইউনিয়ন ও পাহাড়তলী ইউনিয়নের একাংশ। এসব পাহাড় কাটার অধিকাংশ মাটি যাচ্ছে রাউজানের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি ও পুকুর জলাশয় ভরাট কাজে। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাউজানের পূর্ব রাউজান রশিদ পাড়া, কাজী পাড়া, জয়নগর বড়ুয়া পাড়া এলাকায় পাহাড় টিলা ও কৃষি জমি কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে দলীয় পরিচয়ে থাকা একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য। দিনের বেলায় খননযন্ত্র ভেকুর উপস্থিতি থাকলেও মানুষের দেখা মেলেনি। স্থানীয় লোকজন ভয়ে কাহারো নাম প্রকাশে অনিহা প্রকাশ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁরা কৌশলে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুরোদমে পাহাড় কেটে ট্রাকে ট্রাকে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এক ট্রাক (দুই’শ ফুট) পাহাড়ি লাল মাটি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা করে। বেপরোয়া হয়ে উঠা মাটি খেকোদের কোনমতে ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রশাসনও নিচ্ছে না কোন ব্যবস্থা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কদলপুর এলাকায় পাহাড়-টিলা কাটায় জড়িত, আবদুল সবুর, জয়নাল মেম্বর, মনচুর। তাদের রয়েছে আলাদা আলাদা সেণ্ডিকেট। এই সেণ্ডিকের সাথে রয়েছে আরো ৩০জন। রাউজান ইউনিয়নে পাহাড়-টিলা কাটায় জড়িত, লোকমান কোম্পানি, বখতিয়া ও জসিম। পৌর এলাকায় পাহাড়-টিলা কাটায় জড়িত সেলিম খান, দিদার, মফিজ, রফিক ও মনু। ডাবুয়া ও হলদিয়া এলাকায় পাহাড়-টিলা কাটায় জড়িত, আক্কাস উদ্দিন, দবির, শাহা আলম।
রাউজান পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি মীর মোহাম্মদ আসলাম বলেন, রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ জায়গা পাহাড়ি এলাকা। এছাড়া কদলপুর, হলদিয়া, ডাবুয়া ও রাউজান ইউনিয়নের একটি অংশ পাবর্ত্য রাঙামাটির সাথে মিশেছে। এ এলাকা সমূহ পাহাড়-টিলা বেষ্টিত। বিগত সরকার আমলে ও বর্তমানে রাজনৈতিক ব্যানার ব্যবহার করে কয়েকটি মাটি সেণ্ডিকেট গড়ে তোলে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে এসব পাহাড়-টিলা। এখন রাউজানের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তিনি প্রশাসনের নিবর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
পূর্ব রাউজান এলাকার শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, সামাজিক বনায়নের গাছ-গাছরাসহ ছোট-বড় অর্ধশতাধিক টিলা রয়েছে রাউজানে। ওইসব টিলায়ও নজর পড়েছে সাবেক সরকারের আমলে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা লোকজনের। তারা নানা কৌশলে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে এলাকার প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যের পাহাড়-টিলা কেটে মাটি বিক্রি ও ট্্রাকযোগে সরবরাহ করছে। বাড়িঘর নির্মাণের অজুহাতে ২০-৩০ ফুট উঁচু টিলা কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে।
রফিকুল আলম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, মাটি ভর্তি ওভারলোডের ভারি ড্রাম্প ট্রাক চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তা ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক বিনষ্ট হচ্ছে। রাউজান উপজেলায় কৃষি সুরক্ষা আইন ভঙ্গ করে প্রতি বছর শত শত বিঘা ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। রাতের আধারে পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে কোথাও না কোথাও ভরাট করা হচ্ছে ফসলি জমি। গড়ে তোলা হচ্ছে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনুমতি ছাড়াই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলেছেন বহু মানুষ। চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, অনুমতি ছাড়াই যারা পাহাড় টিলা কেটে পরিবেশ বিনষ্ট করছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদুয়ানুল ইসলাম বলেন, পাহাড়-টিলা কাটার অপরাধে কদলপুর এলাকায় আদালতের অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের জমিরানা করা হয়েছে। কেউ অনুমতি ছাড়াই পাহাড় টিলা কাটলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পূর্ব রাউজানে পাহাড়-টিলা কাটার খবর পেয়েছি। এগুলো বন্ধ করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কৃষি জমি ভরাট বিষয়ে তিনি বলেন ,কৃষিজমি ভরাট করে বসতবাড়ি কিংবা অন্য কিছু করতে হলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। কেউ অনুমতি না নিয়ে থাকলে সেটা অপরাধ হিসাবে গন্য হবে।


