সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার: কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে ইট ভাটা মালিকদের কারনে রাবার ড্যাম ফুলাচ্ছেননা কর্তৃপক্ষ। ফলে সেচ ও পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার একর ফসলী জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইট ভাটা মালিকদেরকে ফসলি জমি থেকে টপ সয়েল কাটার সুযোগ দিতে রাবার ড্যাম না ফুলিয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
এতে আসন্ন বুরো মৌসূমে বীজতলা তৈরী করতে পারছেনা চাষীরা। ফলে উপরোক্ত সব জমিতে কৃষি উৎপাদন পিছিয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, ঈদগাঁও নদীতে স্হাপিত দুটি রাবারড্যাম থেকে শুস্ক মৌসূমে উপজেলার ফসলী জমিতে পানি সরবরাহ করা হয়। ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ও পোকখালী রাবার ড্যাম থেকে এতদ এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার একর ধানক্ষেত ও সবজিক্ষেতে এ পানি দিয়ে চাষ করা হয়। তবে, পোকখালী রাবার ড্যাম দুই সপ্তাহ আগে ফুলিয়ে ফসলি জমিতে পানি সরবরাহ শুরু হলেও ঈদগাঁও রাবার ড্যাম এখনো ফুলানো হয়নি।
জালালাবাদ পালাকাটার সালাহ উদ্দীন বলেন, এক মাসেরও বেশী সময় আগে আমন ধান কেটে নেয়ার পর থেকে এখানকার শষ্যভান্ডার খ্যাত বিশাল বিলগুলো খালি পড়ে আছে। জালালাবাদের ধনকা বিল, চৌফলদন্ডী বিল, ইসলামাবাদ বিল ও আরো অন্যান্য বিলের উর্বর ফসলী জমিতে আসন্ন বুরো মৌসূমের জন্য এখনো পানি সরবরাহ করা হয়নি। এর ফলে চরম বিপাকে উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার একর ফসলি জমি, কৃষক ও কৃষিখাত।
এমনকি বুরোধান মৌসুমের জন্য বীজতলা তৈরীর সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও পানির অভাবে বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার চাষী কাউছার মিয়া বলেন, রামুর ঈদগড় থেকে উপজেলার পোকখালী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারব্যাপী ঈদগাঁও নদীর চরে চাষকৃত শত শত একর সবজিক্ষেতও এখন সেচের পানি সংকটে পড়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন বিলে বিগত আমনধান মৌসুমের ধান কাটার পর ধানক্ষেত থেকে টপসয়েল কাটার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ইটভাঁটা মালিকদের সাথে রাবার ড্যাম কর্তৃপক্ষ, স্কিম ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্টদের গোপন আতাঁতের অভিযোগ তুলেছেন চাষীরা।
স্থানীয় চাষীরা বলেন, জালালাবাদ ইউনিয়নের লরাবাক, পালাকাটা ও ফরাজী পাড়া সংলগ্ন ধনকা বিলের ফসলী জমি থেকে রাতদিন মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক ডাম্পার ট্রাক ও ডজন খানেক এক্সেভেটর দ্বারা এসব মাটি কাটা হচ্ছে। এমনকি রাতেও শক্তিশালী সার্চলাইট জালিয়ে মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে এরা। স্হানীয় একটি সিন্ডিকেট মাটি কাটা ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না বলে জানা গেছে।
ট্রাক্টর চালক আবদু ছালাম জানান, ধানক্ষেতে পানি প্রবাহের জন্য ঈদগাঁও রাবার ড্যাম না ফুলিয়ে এখনো নালাকাটার কাজ সম্পন্ন করেনি কর্তৃপক্ষ।
চালক গিয়াস উদ্দিন বলেন, রহস্যজনক কারনে ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ফুলানো হচ্ছে না। এ সুযোগে বৃহত্তর ঈদগাঁও’র বিভিন্ন এলাকার ব্রিকফিল্ডে এখন ফসলীজমি থেকে রাত দিন টপসয়েল কেটে নিচ্ছে ইট ভাটা মালিকরা।
সরেজমিন দেখা যায় জালালাবাদ ধনকা বিল, মধ্যম পোকখালী বিল ও ঈদগাঁও মাইজ পাড়ার ঝাঁইক্যা কাটা বিলের বিভিন্ন পয়েন্টেও ডজনখানেক শক্তিশালী এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। ফসলী জমিতে পানি উঠলে এই মাটিকাটা সম্ভব হবেনা। তাই রাবার ড্যাম ফুলানো হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
এলাকাবাসী জানায়, বিভিন্ন কলাকৌশল ও মোটা অঙ্কের টাকায় চারদিক ম্যানেজ করে রাবার ড্যাম ফুলানো হচ্ছেনা। আর এতে চরম বিপদে পড়েছে ৫ ইউনিয়নের সাড়ে পাঁচ হাজার একরের কৃষিজমি। এখনই বুরো চাষ শুরু করা না গেলে পরবর্তীতে চৈত্র-বৈশাখ মাসে সেচ সংকট হতে পারে। এতে বৃহত্তর ঈদগাঁও এলাকায় ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশংকা রয়েছে।
ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সেক্রেটারী শাহনেওয়াজ মিন্টু রাবার ড্যাম থেকে শীঘ্রই পানি সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর কামরুজ্জামান কবির বলেন, রাবার ড্যাম থেকে পানি ছাড়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


