রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই দেশের অর্থনীতি সচল রয়েছে, অথচ সেই প্রবাসীদের প্রতিই সরকারের চরম অবহেলা—এ প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
হাবিব বলেন, গার্মেন্টস শিল্প প্রায় আড়াই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে—এটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এক কোটি প্রবাসী দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে শক্ত করে রেখেছে। এই এক কোটি মানুষ দেশে থাকলে রাষ্ট্রের ব্যয় আরও বাড়তো। অথচ তারা প্রবাসে গিয়ে ঘাম ঝরিয়ে নগদ অর্থ পাঠিয়ে দেশকে সচল রাখছে। তাহলে তাদের প্রতি সরকারের এত অবহেলা কেন?
তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টসসহ বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে বিপুল ঋণ নিয়েছে, যার বড় অংশই ঋণখেলাপি। অথচ প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধারা কোনো ঋণ না নিয়ে বরং দেশকে আরও দিচ্ছে। সরকারও তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয় না। খুব প্রয়োজনে ঋণ দিলেও ১০ শতাংশ সুদে নিতে হয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার গঠনের সুযোগ পেলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচিত সরকার প্রবাসে যাওয়ার আগে সরকারি খরচে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে এবং প্রবাসীদের আর্থিক সহায়তা দেবে। দক্ষতার অভাবে আমাদের অধিকাংশ প্রবাসী অন্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় কম বেতন পান। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রবাসীদের জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা পরে পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে মালবাহী কার্গো বিমানে প্রবাসীদের যাতায়াত বন্ধ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মানবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। আওয়ামী লীগ আমলে বিপুল মানুষ প্রবাসে গেলেও দক্ষতার অভাবে অনেকে কাজ পাননি। করোনাকালে ফেরত আসা প্রবাসীদের জন্য ব্যাংক ঋণ ও পুনরায় বিদেশ যাত্রায় সহায়তার দাবি জানানো হলেও সরকার কর্ণপাত করেনি। অথচ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সব ধরনের সহায়তা পেয়েছে।
লিবিয়ায় আটক ২৫ জন বাংলাদেশি প্রবাসীকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়ে হাবিব বলেন, উন্নত দেশে যাওয়ার আশায় প্রতারণার শিকার হয়ে তারা লিবিয়ার সাগরে আটক হন। তাদের পরিবারকে ফোনকল করে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে, টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
সমাবেশে ভুক্তভোগী লিবিয়া প্রবাসী নাজমুলের বাবা পুরক মিয়া বলেন, তার ছেলে এক বছর ধরে লিবিয়ার ত্রিপোলি কারাগারে বন্দি। দালালচক্র বারবার বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করলেও তা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে ছেলেসহ বাংলাদেশিকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার আকুল আবেদন জানান।
‘প্রবাসীর ডাক’-এর প্রধান সমন্বয়ক মো. মঞ্জুর হোসেন ঈশার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, মৎসজীবী দলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী, বাস্তহারা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক সচিব ড. আনিস আউয়াল, মানবাধিকারকর্মী মনিরুল ইসলাম মনির, আবদুর রহিমসহ অন্যরা।
বক্তারা অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা বন্ধে সরকারের কঠোর নজরদারি এবং প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবি জানান।


