মহান ভাষা আন্দোলনে নারীর উল্লেখযোগ্য অবদান থাকলেও ভাষা সৈনিকদের তালিকায় নারীর অবদান ইতিহাসের পাতায় সেভাবে উঠে আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, সভ্যতার গোড়াপত্তন ও তার ক্রমবিকাশে নারীর ভূমিকা পুরুষের চেয়ে কম নয়। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারী পুরুষের সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভাষা সংগ্রামে নারীদেরও অগ্রণী ভূমিকা ছিল কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সে ভূমিকা আজও অস্বীকৃতই রয়ে গেছে। নারী ভাষা সংগ্রামীদের নাম উচ্চারিতই হয় না বললেই চলে। ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস সঠিকভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এখনই আমাদের উদ্যোগী হতে হবে-নতুবা ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনসহ সকল প্রকার অনিয়ম অত্যাচারের বিরুদ্ধে যত ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ভূমিকাও অনস্বীকার্য। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার নারী বান্ধব সরকার। তিনি নারীদের উন্নয়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। হাসিনা মহিউদ্দিন আরো বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নকে তরান্বিত করার জন্য আসুন আমরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। তিনি ছেলে মেয়ে ও নিজের জ্ঞান বিকশিত করার জন্য সকলকে বইমেলা থেকে বই কিনে পড়তে ও উপহার দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলা মঞ্চে নারী উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
চসিক প্যানেল মেয়র আফরোজা কালামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সোহানা শারমিন তালুকদার। আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন চসিক সংরক্ষিত কাউন্সিলর নীলু নাগ, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মমতাজ খান, শারমিন ফারুক সুলতানা, কবি শবনম ফেরদৌসী ও বিশিষ্ট লেখিকা রেহেনা চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বই মেলা কমিটির আহবায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু ।
প্রধান বক্তা সোহানা শারমিন বলেন, যে সময়ে ভাষা আন্দোলন হয় সেই সময় নারীরা ছিল অন্দরমহলের বাসিন্দা। তাদের পড়াশোনা করার সুযোগও তেমন ছিল না। যা একটু পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন তাও ছিল নারী-পুরুষের বৈষম্যের বেড়াজালে আবদ্ধ। তবুও তারা পিছপা হননি। ছেলেদের পাশে থেকেছেন। মিছিল করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু মিছিলে অংশগ্রহণ আর নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাই নয়, ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য অনেক নারীকে জেল খাটতে হয়েছে। কেউ হারিয়েছেন সংসার, কেউবা বহিষ্কৃত হয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। শুধু ঢাকা নয়, রাজশাহী, খুলনা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের প্রায় সবক’টি বড় শহরের সচেতন প্রগতিশীল নারী ও ছাত্রীরা যুক্ত হয়েছিল এ আন্দোলনে। তিনি ড. সুফিয়া, ড.হামিদা খাতুন, জুলেখা বেগমসহ বিভিন্ন সংগ্রামী নারীদের নাম উল্লেখ করে বলেন, নারীদের কী অসীম সাহসিকতা ও দৃঢ়তা থাকলে এভাবে একটি আন্দোলনে যোগ দেওয়া সম্ভব তা সহজেই অনুমান করা যায়।
আগামীকাল বইমেলা মঞ্চে রবীন্দ্র উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ.টি.এম পিয়ারুল ইসলাম। প্রধান বক্তা অধ্যক্ষ রীতা দত্ত ও আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য। সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল।