বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে জাতীয় রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন, সেই স্বাধীন রাষ্ট্র আজ পরাধীন হয়ে গেছে। স্বাধীনতার যে স্বাদ, সেটা এদেশের মানুষ পাচ্ছে না। দেশের অর্থনীতি দেউলিয়া হয়ে গেছে, মানবাধিকার নেই। এদেশের মানুষ আবার মুক্তি চায়। মানুষ আবার লড়াই করতে চায়, যে লড়াইয়ের মাধ্যমে একাত্তরে জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং সেই জাতীয় রাষ্ট্রের যে উপাদানগুলো ছিল, সেগুলো যাতে আবার নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য দেশের মানুষ লড়তে চাই। জিয়াউর রহমানের রাজনীতির পথ ধরে আমরা এগিয়ে যাব। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। দেশনায়ক তারেক রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব। আমরা লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ, সামাজিক ন্যায়বিচার আবার প্রতিষ্ঠা করব।
তিনি মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকালে কাজীর দেউরী এপোলো শপিং সেন্টারের উপরে টাইম স্কয়ার কমিউনিটি সেন্টারে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. ছিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, একরামুল করিম, এম এ সবুর, যুগ্ম আহবায়ক এড. আবদুস সাত্তার, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. এনামুল হক, জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, এড. মুফিজুল হক ভূইয়া, জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের হাসান আরিফ।
শহীদ জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে লায়ন আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ও হাসান আরিফের তত্ত্বাবধানে শহীদ জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবন এবং আত্মজীবনী নিয়ে বিভিন্ন লেখকের বই প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনায় আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ইতিহাসের পরিবর্তন করা যায় না, ইতিহাস তার নিজস্ব গতিতে চলে। স্বাধীনতার যুদ্ধ বাই ডিক্লারেশন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ২টা ৩৫ মিনিটে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। তিনি জাতীয় রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। জিয়াউর রহমান যদি বাই ডিক্লারেশন যুদ্ধ করার কথা না বলতেন, তাহলে সেটা গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত হত, স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপান্তরিত হতো না। তাই জিয়াউর রহমান সেদিন ঘোষণা করেছিলেন, পাকিস্তানের সাথে আর থাকা যায় না। আমরা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী থেকে বেরিয়ে এসেছি। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার জন্য আমরা লড়াই করছি। আপনারা দেশের মানুষ, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল, আমাদের দেশকে স্বাধীন করার জন্য আমাদের সমর্থন করুন। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যে গুণগত পার্থক্য, একটা হচ্ছে লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, আরেকটা হচ্ছে লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা। জিয়াউর রহমান সেদিন এই চট্টগ্রামের ষোলশহরে তেলের ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন এবং যুদ্ধ নিয়ে এগিয়ে গেলেন।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনে দেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল এবং নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করল। গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়নি, লড়াই করতে হয়েছে সামরিক বাহিনীকে। যে সামরিক বাহিনী নিশ্চুপ ছিল, কি করবে বুঝতে পারছিল না, জিয়াউর রহমানের কন্ঠস্বর শুনে সেই সামরিক বাহিনীও উজ্জীবীত হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের নিজের বক্তব্য হচ্ছে, যখন আমি দেখলাম, করাচিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাঙালিদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে, তখন করাচিতেই আমি এক কুস্তিখেলায় তাদের পরাজিত করেছিলাম। সেদিন থেকেই আমি বলেছিলাম যে, এই পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যাবে না। একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসেবে লড়াইয়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও তখন নিয়েছিলেন তিনি।
নোমান বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যাবে না। পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে থেকে যুদ্ধ করলে সেটা হতো গৃহযুদ্ধ। আমাদের যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমে অনেক রাষ্ট্র সমর্থন দিতে অনীহা প্রকাশ করে। তারা বলেছিল, এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। জিয়াউর রহমান যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিত, তাহলে বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন মিলতো না, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ গৃহযুদ্ধই হয়ে থাকতো সেটা।
নিজের রাজনৈতিক জীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ১৯৭০ সালে স্লোগান দিয়েছিলাম, মুক্তি যদি পেতে চাও, অস্ত্র নিয়ে দাঁড়াও। সেই স্লোগানের জন্য পাকিস্তান আমাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়ে স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা দিয়েছিল। জিয়াউর রহমান যদি আমাদের লড়াইয়ের পথ না দেখাতেন, তাহলে দেশ স্বাধীন হতো না। আর আমি রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে পাকিস্তানের জেলখানায় থাকতাম। জিয়াউর রহমান লড়াইয়ের মাধ্যমে একটি জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ পেয়েছি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের রাজনীতি হচ্ছে এদেশের মানুষের জন্য।মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য। স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত মন্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রেড্ডি বলেছিলেন জিয়াউর রহমান একজন দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্যকে আওয়ামী লীগের কোন নেতা চ্যালেঞ্জ করতে পারে নাই। এই বক্তব্যের পরে তাদের কোন বক্তব্যও থাকতে পারেনা।জিয়াউর রহমান বলেছিলেন তালপট্টিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়বে। মুসলিম দেশের রাষ্ট্রনায়করা আমাদেরকে সমর্থন দিবেন। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা ভারতকে ছেড়ে দেবনা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। দেশে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই, তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আজকে সরকারের অবস্থান দেশেও নাই, বিদেশেও নাই। আমরা সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনে আছি। আমাদের বিজয় খুব কাছাকাছি। এই সরকারের পতনের ঘণ্টা বাজাতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে জিয়াউর রহমান কোন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন সৈনিক। সেই সৈনিক থেকে সময়ের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের নেতারা যখন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল সেদিন চট্টগ্রামে আই রিভোল্ট বলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বর্তমানে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতারা এখন অনেক বিতর্কিত কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেদিন আওয়ামী লীগের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরা এখন যা বলছে, তা হলো প্রপাগণ্ডা।আওয়ামী লীগের অনেকেই ১১ নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডারের দাবি করেন। কিন্তু গুগোলে ১১ নং সেক্টর কমান্ডারের নাম সার্চ করলেই শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম ভেসে আসে। আবুল হাশেম বক্কর বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন সেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে বাংলাদেশকে উন্নত ও আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়াতে পারতো। কিন্তু দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের কারনে তিনি তা করতে পারেননি। আবু সুফিয়ান বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর শাসনামল ছিল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ। কৃষি থেকে শুরু করে রেমিটেন্সসহ অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছিল জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহবায়ক কমিটির সদস্য হারুন জামান, এস এম আবুল ফয়েজ, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ, মন্জুর আলম চৌধুরী মন্জু, মো. কামরুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, মহিলাদলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরী, থানা বিএনপির সভাপতি মন্জুর রহমান চৌধুরী, মো. আজম, মোশাররফ হোসেন ডেপটি, থানা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জাকির হোসেন, জসিম উদ্দিন জিয়া, মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, তাঁতীদলের আহবায়ক মনিরুজ্জামান টিটু, সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান মুরাদ, জাসাসের আহবায়ক এম এ মুছা বাবলু, সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ শিপন প্রমূখ