যুদ্ধ আইনের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। শুক্রবার তিনি এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন। গাজা রয়েছে পানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ, ওষুধের সংকটে পূর্ণাঙ্গ অবরোধে। এ অবস্থায় গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ১১ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়া চরমমাত্রায় বিপজ্জনক এবং পুরোপুরি অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন গুতেরাঁ।
অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় ইসরাইলি অভিযান বন্ধের আহ্বান না জানালেও তিনি বলেছেন, যুদ্ধেরও নিয়মকানুন আছে।
ওদিকে ইসরাইলকে গাজার জন্য তার ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক এজেন্সিগুলো। অবরুদ্ধ গাজায় ভয়াবহ এক পরিণতির মুখে রয়েছেন সেখানকার মানুষগুলো। তার মধ্যে আছেন নারী, প্রবীণ ও শিশু। তারা যখন জীবন বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, তখন ইসরাইলি সেনাদের এই আল্টিমেটাম তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। এমন নির্দেশ দেয়া আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।
গাজাবাসীকে সরানোর নির্দেশের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরাও। আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপের্টিউর পলা গাভিরিয়া বেতানচুর বলেন, জোরপূর্বক কোনো জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করা মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং সেটা সমষ্টিগত শাস্তি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনে এটা নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরাঁ, যাতে সেখানে নিষ্পেষিত মানুষগুলো খাদ্য, পানি এবং জ্বালানি পান। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিটিংয়ের আগে তিনি বলেন, যুদ্ধেরও নিয়মকানুন আছে। যুুদ্ধে জড়িত সবার প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং মানবাধিকার বিষয়ক আইনের মূলনীতির প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। যাতে বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষিত রাখা যায়, তাদেরকে যেন কখনোই মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা না হয়। হামাসের কাছে আটক সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান গুতেরাঁ।
নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি রুদ্ধদ্বার বৈঠক আহ্বান করেছে ব্রাজিল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ মাসেই পর্যায়ক্রমিক হিসাবে পরিষদের প্রেসিডেন্সি পাচ্ছে ব্রাজিল। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েইরার সভাপতিত্বে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সম্ভাব্য একটি মানবিক করিডোর প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতাও ছিল এই আলোচনায়। এমন একটি করিডোর স্থাপনের দাবি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। কারণ, হাসপাতালগুলো জ্বালানি সঙ্কটে, বিদ্যুৎ সঙ্কটে পরিচালনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। এরই মধ্যে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস সতর্কতা দিয়ে বলেছে, পানির ভয়াবহ সঙ্কটে পান করার পানির কষ্টে ভুগছেন কমপক্ষে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ।
পরিষদের বৈঠক শুরুর আগে জাতিসংঘে বৃটেনের স্থায়ী প্রতিনিধি বারবারা উডওয়ার্ড যুদ্ধে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সবার জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তবে হামাসের কর্মকাণ্ডের সর্বসম্মত মতের সঙ্গে তিনিও নিন্দা জানান। তিনি বলেন, হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে কথা বলে না। তিনি তাদের হাতে জিম্মিদের উদ্ধারে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোকে সব কিছু করার আহ্বান জানান।
গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধের আহ্বান জানাবেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে উডওয়ার্ড বলেন, তার দেশের অবস্থান পরিষ্কার। তা হলো অ্যাকশন হতে হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক আইন অনুসারে। এ বিষয়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে যখন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কথা হয়েছে তখন সুনাক তাকে অনুরোধ করেছেন অ্যাকশন নেয়ার সময় যেন বেসামরিক লোকজন নিরাপদ থাকেন।


