নিজস্ব প্রতিবেদক::
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বহুল আলোচিত শিশু কাজী মশিউর রহমান ওয়াসিম হত্যা মামলার রায় ঘোষনা করেছেন আদালত। ৯জুন রবিবার সকালে ১ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রবিউল আউয়াল আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ১ জন আসামীকে মৃত্যুদন্ড অপর আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর বিকেল ৫টায় মিরসরাইয়ের মঘাদিয়া ভূঁইয়া তালুক কাজী বাড়ির কাজী মোশাররফ হোসেন বাবলুর ছেলে ৫ বছরের শিশু ওয়াশিমকে হত্যা করে বাড়ির পূর্ব পাশের ছনখোলায় ফেলে রাখে। আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব শিশু ওয়াশিমকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা দিয়ে শিশুটির মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামী বাড়িতে চলে আসে। তার মা, বাবা ও ভাইকে ঘটনা খুলে বলে বাড়িতে লুকিয়ে থাকে। আসামীর পরিবারের সদস্যরা ছনখোলা থেকে শিশু ওয়াশিমের লাশ বস্তাবন্দী করে পাশের ধানক্ষেতে ফেলে দেয়। শিশুটিকে না পেয়ে জেঠা কাজী একরামুল হক মিরসরাই থানায় পরের দিন ২৩ নভেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। ঘটনার পরদিন শিশুর বস্তাবন্দী লাশ ধান ক্ষেতে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে শিশু ওয়াশিমের লাশ নিশ্চিত করে। ঘটনাস্থল ছনখোলা থেকে আসামী পল্লবের মোবাইল ও শিশুটির স্যান্ডেল উদ্ধার করে হত্যাকারীকে সনাক্ত করে এবং পুলিশকে পল্লবকে তাদের বাড়ি থেকে আটক করে। পল্লব উপস্থিত লোকজনের সম্মুখে পুলিশের উপস্থিতিতে ওয়াশিমকে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করে। একইভাবে আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দেয়।
গত ৩/৯ (১-৬ তারিখ পল্লব, তার ভাই বিপ্লব ও তার পিতা-মাতার বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের পর মামলার বাদী, ডাক্তার, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২১ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষী দেয়। গত ২৯ মে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালতের বিচারক আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লবকে মৃত্যুদন্ড ও কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লবকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। অপর ২ আসামী মামলা চলাকালীন মৃত্যুবরণ করেন। রায় প্রচারকালে আসামীগণ জেল হাজতে থাকায় তাদেরকে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জেলা পিপি এড. ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তাকে সহযোগিতা করেন অতিরিক্ত জেলা পি.পি এড. মো. দেলোয়ার হোসেন, বাদী পক্ষে ছিলেন, এড. শতু প্রসাদ বিশ্বাস, এড. মুজিবুর রহমান ফারুক, আসামী পক্ষে এড, ড. আবুল কালাম সামসুদ্দীন, এড, পলাশ চৌধুরী। নিহত ওয়াশিমের পিতা মোশারফ হোসেন বাবুল তার ছেলে হত্যার বিচারের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।