গতকাল শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জিলানীর ওপর হামলা ও সংগঠনটির ক্রীড়া সম্পাদক দিদারকে শহীদ করা হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিষ্কার করে বলতে চাচ্ছি এখনো হায়নারা (আওয়ামী লীগ) লুকিয়ে আছে, যেকোনো সময় আক্রমণ করবে। হায়নাদের আক্রমণকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে।
আজ শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণসভায় বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন। এই স্মরণ সভার আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের জন্য এ দেশের মানুষ সবসময় আত্মত্যাগ ও প্রাণ দিয়েছে। ’৭১ যখন আমার স্বাধীন হলাম, তখন ভেবেছিলাম সত্যিকার অর্থে আমরা একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশ পাবো। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের দাবিদার ছিলেন প্রথম তাদের অর্থাৎ আওয়ামী লীগের হাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হয়। ৭৫ সালে তারা একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। এ কথা একবার বললে হবে না, বারবার বলতে হবে। এই দলটি আবার ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান গুলোকে ধ্বংস করেছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে বারবার দমন করতে নির্যাতন, গুম খুন করেছ। এর ফলশ্রুতিতে জুলাই মাসে ও ১৭ বছর এদেশের গণতান্ত্রিক মানুষ জীবন নিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন।
আন্দোলনে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের কথা তুলে ধরে অভিবাদন জানিয়ে তিনি বলেন, স্যালুট জানান বেগম খালেদা জিয়াকে, গণতন্ত্রের প্রশ্নের তিনি কখনো আপোষ করেননি, মাথা নোয়াননি। দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে ছিলেন ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি মুক্ত হয়েছেন। সেই সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও অভিবাদন জানান তিনি।
নেতাকর্মীদের কোনোভাবেই ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে পা না দেওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা স্বাধীন হয়েছি, হয়তবা স্বাধীন হয়েছি কিন্তু চারদিকে নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস। তারা তাদের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ভাবে আমাদের মাঝে বিভেদ তৈরির জন্য পাঁয়তারা করে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণঅভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে আমরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছি। এই সরকারের কাছেই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আকাশচুম্বী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আশা তারা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে সত্যিকার অর্থে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৬ বছর ধরে যারা পঙ্গু ও নিহত হয়েছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে সরকার প্রধানের কাছে দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
১৬ বছর ধরে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনীতি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে তা অতি দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে —এমন দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির কাছে অঙ্গীকার করতে চাই, সত্যিকার অর্থে প্রকৃত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাব। তবে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে কেউ যেন আমাদেরকে বিপথের না নিয়ে যায়। কোন মতেই আমরা যেন আমাদের লক্ষ্য ও পথ না হারাই।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন বক্তব্য রাখেন।
এর আগে, দুপুর আড়াইটা থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশে অংশ নিতে শহীদ মিনারে সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সমাবেশে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মীরা কর্মসূচির প্রাঙ্গণে অবস্থান করেন। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন। এর আগে কর্মসূচিতে অংশ নিতে দুপুর ব্যানার ও ফেস্টুন সহকারে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সমাবেশের শুরুতে আন্দোলন শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। আন্দোলন দিনগুলোর ভয়াবহ হামলার চিত্র মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরেন অভিনয় শিল্পীরা। সবশেষে দলীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে স্মরণসভার সমাপ্তি হয়।