মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই(রাঙামাটি): এ যেন নবীন প্রবীনদের মেলবন্ধন। দীর্ঘ বছর পর পুরানো বন্ধুদের পেয়ে কুশলাদি বিনিময়, সে সাথে স্কুল জীবনের স্মৃতি রোমন্থন। পেছনে ফেলে আসা অতীতকে ফিরে পা্বার আকুতি। ছবি তোলা, পরিবারের খবর নেওয়া, হাসি আড্ডায় মুখরিত অনুষ্ঠানস্থল।
কাপ্তাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদের ব্যবস্থাপনায় শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের স্টাফ ক্লাবে মিলনমেলা-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়। এই মিলন মেলায় প্রাক্তন, বর্তমান শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে মুখরিত হয়ে উঠে অনুষ্ঠানস্থল। মিলন মেলায় ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিবন্ধনকৃত মোট ৫শ’ ৩৫ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং পুরাতন ও বর্তমান শিক্ষক শিক্ষিকাগণ অংশ নেয়।
“এসো মিলি প্রাণের মোহনায় প্রিয় শিক্ষাঙ্গন পাহাড়িকার আঙিনায়” এই শ্লোগানে আয়োজিত মিলন মেলার শুরুতেই ওইদিন সকাল ১০ টায় একটি বর্নাঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতাল মাঠ থেকে শুরু হয়ে দোভাষীবাজার হয়ে লিচুবাগান প্রদক্ষিণ করে হাসপাতালের স্টাফ ক্লাবে এসে শেষ হয়।
র্যালীতে অংশ নেওয়া পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক ও ১৯৯০ ব্যাচের শিক্ষার্থী চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবীর খিয়াং বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যারা এই বিদ্যালয় হতে পাস করে বের হয়েছে তাদের অনেকেই আজকে এই মিলন মেলায় অংশ নিচ্ছে। আগামী বছর আমরা বৃহৎ একটা পুর্নমিলনী করবো, তার আগে আজকে আমরা মিলন মেলার মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহন করছি। উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব শেখ রায়হান আকাশ বলেন, আমরা জাঁকজমক পূর্ণভাবে এই মিলন মেলায় অংশ নিয়েছি। অসুস্থ অবস্থায় মি়লন মেলায় অংশ নেয় পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৭৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রবীন ব্যক্তি এসএম সামুসুদ্দিন। তিনি বলেন, এই মিলন মেলায় অংশ নিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং ওই স্কুলের ১৯৮১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. নুরনবী বলেন, এই রি-ইউনিয়নে অংশ নিতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও ১৯৭৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী সুনীল কান্তি দাশ বলেন, পুরানো ছাত্রদের পেয়ে আমার খুবই ভালো লাগছে। মিলন মেলায় অংশ নেওয়া স্কুলের ১৯৮৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুণ তালুকদার, ১৯৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কাপ্তাই নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা মিলন মেলায় অংশ নিতে পেরে খুবই আনন্দিত। পুরানো বন্ধুদের সাথে অনেকদিন পর দেখা হয়েছে।
এদিকে, মিলন মেলায় অংশ নেওয়া ১৯৮০ ব্যাচের হোসনে আরা, ১৯৯২ ব্যাচের উমাচিং মারমা এবং ১৯৯৪ ব্যাচের শশী দেবনাথ বলেন, সত্যিই আমরা খুবই আনন্দিত। এই মিলন মেলার মাধ্যমে আমরা ক্ষনিকের জন্য আমাদের কৈশোরে ফিরে গেলাম।
অন্যদিকে র্যালী শেষে সকাল সাড়ে ১১ টায় হাসপাতালের ডা. স্টীফেন চৌধুরী স্টাফ ক্লাবে, সংবর্ধনা, স্মৃতিচারণ ও এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক ও ১৯৯০ ব্যাচের শিক্ষার্থী চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবীর খিয়াং সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তারের সঞ্চালনায় এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ। তিনি বলেন, এই মহামিলন মেলায় এসে আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করছি। এই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দেশের অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করে স্কুলের সুনাম বহে এনেছেন। মিলন মেলার মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠবে এবং স্কুলের কল্যান হবে।
স্মৃতিচারণ এবং আলোচনা সভায় অংশ নেয় পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মো. নুরনবী, ১৯৭৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রবীন ব্যক্তি এস এম সামুসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুনীল কান্তি দাশ ও তিমির পদ বড়ুয়া, প্রাক্তন ছাত্র কর্ণফুলি সরকারি কলেজের প্রভাষক আবু তালেব, প্রাক্তন ছাত্র মাসুদ রানা, প্রাক্তন ছাত্রী লাভলি ঘোষ, প্রাক্তন ছাত্র কেএম সামিউদ্দিন, প্রাক্তন ছাত্র ও উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মো. ইরফান, প্রাক্তন ছাত্র জয় চক্রবর্তী, প্রাক্তন ছাত্রী সুচন্দা বড়ুয়া, শান্তা পালিত, আমজাদ হোসেন মনজু। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব শেখ রায়হান আকাশ। পরে প্রাক্তন শিক্ষক এবং প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
এদিকে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ এবং মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে বেলা প্রায় আড়াইটায় হাসপাতাল মাঠে এক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেলে মিলনায়তনে স্কুলের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ” নাটাই” তাদের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করেন।