বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের উত্থানের নিন্দা জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে তিনি গণতন্ত্রী দেশগুলোকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলছে- নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসে শুক্রবার ভাষণে ট্রুডো বলেন, আমরা যদি পদক্ষেপ নিয়ে অগ্রসর না হই, তাহলে অন্য শক্তিগুলো এগিয়ে আসবে। সম-মনা গণতন্ত্রপন্থি এবং বড় অর্থনীতিকে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী একত্রিত হতে হবে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাশিয়া এবং চীনকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে কানাডা ও এর মিত্রদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থনৈতিক প্রণোদনার মাধ্যমে মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি শক্তিশালী করতে। ট্রুডো বলেন, অশুভ ‘অ্যাক্টর’দেরকে আমরা শুধু পুশব্যাক বা শাস্তি অথবা তাদেরকে বাইরে রেখে দিতে পারি না। উদাহরণ হিসেবে আমরা শুধু এটা বলতে চাই না যে, চীন থেকে আমাদের যেসব কোম্পানি সুনির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কিনছে তাতে বিধিনিষেধ দিতে। পক্ষান্তরে যেসব স্থানে জোরপূর্বক শ্রম নিষিদ্ধ আছে, সেখান থেকে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ আহরণে শ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত। কারণ, সেখানে নিরাপত্তার মানদণ্ড থাকে।
যেসব শ্রমিক সেখানে কাজ করেন তাদের জীবন ধারণের মতো মজুরি দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা শ্রমদাস ব্যবহার করি না। তাই কানাডায় লিথিয়াম উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি। উল্লেখ্য, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি যেসব দেশে লিথিয়াম উৎপাদন হয় তার মধ্যে অন্যতম চীন। অস্ট্রেলিয়া এবং চিলির পরেই চীনের অবস্থান। লিথিয়াম একটি ধাতব পদার্থ। ব্যবহার করা হয় মোবাইল ফোনে এবং ইলেকট্রিক ব্যাটারিতে। ট্রুডো বলেন, তার প্রশাসন পরিবেশের মতো ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চায়। কিন্তু এশিয়ার এই দেশটি বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বৈশ্বিক শক্তি হয়ে উঠছে।
চীন এবং কানাডার মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং কানাডার ভিতরে ‘পুলিশ স্টেশন’ প্রতিষ্ঠার জন্য চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অটোয়ার। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর আগে নভেম্বরে দুই নেতার মধ্যকার প্রাইভেট আলোচনা মিডিয়ায় ফাঁস হওয়ার জন্য ট্রুডোর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তবে দুই নেতার মধ্যে কোনো সমালোচনা হয়নি বলে এমন বিষয়কে অস্বীকার করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের কথোপকথনকে স্বাভাবিক বলে অভিহিত করা হয় এতে। শুক্রবার ট্রুডো বলেন, মানবাধিকারের মতো ইস্যুতে চীনের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতা করতে যাচ্ছি। সেই মানবাধিকার হোক সিনজিয়াং অথবা হংকং বা অন্য কোন স্থানের।
রাশিয়ার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ট্রুডো ইউরোপিয়ান মিত্রদের প্রশংসা করেন। এসব মিত্ররা এর আগে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। তারা এখন পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচক কানাডিয়ান সরকার। এই আগ্রাসনকে বিনা উস্কানিতে, অন্যায় আগ্রাসন বলে অভিহিত করে কানাডা।
ট্রুডো বলেন, ইউরোপে যুদ্ধ ফিরেছে। কর্তৃত্ববাদের উত্থান ঘটছে।