শামসু উদ্দিন, টেকনাফ(কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
সীমান্তে মাদক-চোরাচালান ও অপরাধ চক্রের তৎপরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। বিনিময়ে সেদেশ থেকে এদেশে প্রবেশ করছে মাদক। উপজেলার সীমান্তের প্রায় অর্ধশত পয়েন্ট দিয়ে দেদারছে আসছে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ আইস সহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য। মাদকের লেনদেন নিয়ে ইতিমধ্যে হত্যা-অপহরণ চক্র বেড়েছে বলে মন্তব্য করতে দেখায় যায় সচেতন মহলকে।
জানা যায়, সীমান্তে মিয়ামারের সিম ব্যবহার করে বাংলাদেশি-মিয়ানমার মাদক ব্যবসায়ীদের আলাপচারিতায় আনা হয় এসব মাদকদ্রব্য। আর এসব মাদকদ্রব্য একাধিক হাতবদল শেষে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট হয়ে কৌশলে সড়ক পথে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নিরাপদ জোন হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন সাগর-নদীর উপক‚লে স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে রয়েছে চোরাকারবারিদের নিজস্ব বলয়। বাংলাদেশি মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্তের লোকজনকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে মাদকদ্রব্য নিরাপদ জায়গায় পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বাড়তি আয়ের আশায় বেপরোয় হয়ে উঠেছে মাদক-চোরাকারবারী সিন্ডিকেট।
একটি সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে জেলে ছদ্মবেশে মাদকের ছোট-বড় চালান মাদক ব্যবসায়ীরা ফোনে যোগাযোগ করে দিনে বা রাতের বেলায় নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের উপকুলে খালাস করে চলিয়া যায়। আবার বিশালাকারের মাদকের চালান সাগর-নদীতে অপেক্ষামান জাহাজে করে পাচার হয়ে যায় দেশ-দেশান্তরে। আর বহনকারীরা সংকেত পেয়ে জেলেবেশে এসব মাদক নিয়ে আসছে অনায়াসে।
মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য হুন্ডি-বিকাশের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সিন্ডিকেট চক্র হুন্ডি-বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশি টাকা হাত বদলে যাচ্ছে মিয়ানমারে।
সূত্র আরো জানায়, মাদকের গডফাদাররা আড়ালে বসে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মাদকের টাকা অটোমেটিক্যালি গডফাদারদের কাছে চলে যায়। বড় বড় মাদকের ডিলাররা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ধরা পড়ে মূলত মাদক বহনকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও লেনদেনের বিষয়টি আড়াল করতেই কোনও একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড দেখিয়ে আসছে একটি চক্র। খুচরা মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় বড় ডিলার পর্যন্ত একটা চেইন নিয়ন্ত্রণ করে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে হুন্ডি-বিকাশের মাধ্যমে মাদকের টাকা লেনদেন করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চোরাকারবারীর সাথে সম্পৃক্ত এক যুবক জানায়, প্রতিদিনই সীমান্ত এলাকার ২০/৩০টি পয়েন্ট দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক আসে। মাদক ক্রয় করতে উপজেলা থেকে মিয়ানমারে টাকা পাঠানো হয়। হুন্ডি-বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পর মিয়ানমার থেকে দিনে কিংবা রাতে সুযোগ বুঝে আনা হয় ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। তবে পরিবহনে সহজ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি আসছে ইয়াবা। আর মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকার গরিব-নিরীহ মানুষদের। মাদক বহনে ব্যবহার হচ্ছে নারী-পুরুষ, যুবক, কিশোর,কিশোরী ও শিশু ছাক্রদের। এতে করে মাদক প্রতিরোধে এক প্রকার হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ওসমান গণি বলেন, মাদক-চোরকারবারীদের যারা বিকাশ বা হুন্ডিতে লেনদেনে সহায়তা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিবো।
সীমান্তে মাদকের লেনদেন নিয়ে বাড়ছে হত্যা-অপহরণ !
সংবাদটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন
একটি মন্তব্য করুন