চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন শ্রম ও কর্ম সংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
গাজীপুর-সাভারে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলন-বিক্ষোভের মধ্যে বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের বেতন পরিশোধের কথা জানিয়েছেন শ্রম ও কর্ম সংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
একইসঙ্গে পোশাকঘণ এলাকা ঢাকার সাভার ও গাজীপুরে চলা শ্রম অসন্তোষের পেছনের প্রকৃত ঘটনা জানতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনের কথাও বলেছেন তিনি।
শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে আসিফ মাহমুদ বলেন, “সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানাগুলোতে যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, আজ ১১ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাত কিংবা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকালের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।”
শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা দ্রুত পরিশোধে কারখানাগুলোর আবেদনে ব্যাংকগুলোকে দ্রুত অর্থ ছাড়ের নির্দেশনা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকেও সরকারের পক্ষ থেকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনে একাধিক সময়ে কারফিউ ঘোষণায় তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উদ্যোক্তারা অগাস্ট মাসের শ্রমিক বেতন পরিশোধে ‘সফট’ ঋণ চান।
সেই দাবি পূরণে ব্যাংকগুলোর কাছে আবেদন করতে বলেছে সরকার।
অগাস্ট মাসের বেতন দ্রুত পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, “কিছু সমস্যা আছে দীর্ঘ মেয়াদের। সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুনে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”
তুমুল গণআন্দোলনের মধ্যে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠীর নানা দাবি নিয়ে রাজপথে নামার পর পোশাক ও ওষুধ শিল্পেও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে।
এ নিয়ে দফায় দফায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনির সদস্য, কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।
সবশেষ গত সোমবারও রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে বৈঠক করেন সমিতির সদস্যরা। প্রতি বৈঠকেই কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকে পরিবেশ শান্ত রাখতে সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস আসে।
তারপরও প্রতিদিনই কারখানায় ছুটি ঘোষণা করছেন মালিক পক্ষ শ্রম অসন্তোষের কারণে। বুধবারও সাভার, আশুলিয়ায় ৬০টির মত কারখানা ছুটি ঘোষণা করে অর্নিদিষ্টকালের জন্য।
শ্রমিকদের দাবি এক জায়গায় শুনতে কমিটি গঠন
শ্রমিকদের সব ধরনের দাবি একটি জায়গার মাধ্যমে গ্রহণ করতে একটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা আসিম মাহমুদ বলেন, “শ্রমিকরা যেন একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিগুলো জানাতে পারে তার জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত কেবিনেট বৈঠকে শ্রম পরিস্থিতি রিভিউ করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। সেই লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
এই কমিটি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরাসরি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সুনির্দিষ্ট করা হবে এবং তা সমাধান করা হবে। কমিটি সমস্যা বুঝে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের সঙ্গে কথা বলবে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বিবেচনা করে এই কমিটি সুপারিশ দেবে।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে একই অধিদপ্তরের সালিশি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের উপ-পরিচালককে।
শ্রম অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব তরিকুল আলম ও উপ-পরিচালক মিতসু শাওলিন।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের তিন জন আইনজীবীও কমিটিতে থাকবেন।