দেশের জনগণকে কোনো সাম্প্রদায়িক উস্কানির ফাঁদে পা না দিয়ে সম্প্রীতি রক্ষার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর পাহাড়তলীর সাগরিকা বিটাক বাজার মোড়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, পাহাড়তলী থানা শাখার উদ্যেগে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এ আহবান জানানো হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন পাহাড়তলী থানা শাখার সভাপতি শুভ দেবনাথের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সহ সভাপতি অয়ন সেনগুপ্ত, সাবেক সহ সভাপতি ডেনি বিশ্বাস,সদস্য স্নেহেন্দু বণিক, পাহাড়তলী থানার সহ সভাপতি নিশান রায়, সাধারণ সম্পাদক সুমন রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রুদ্র রায়, দপ্তর সম্পাদক শুভ দাশ প্রমুখ। সমাবেশে সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, পাহাড়তলী থানা শাখার সাংগাঠনিক সম্পাদক প্রিন্স দাশ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ৫ই আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পতনের মাধ্যমে দেশের মানুষ যে আকাঙ্খা নিয়ে স্বপ্ন দেখিছিল, তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই না। বরং আমরা দেখেতে পাচ্ছি দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা, মন্দির, মসজিদ, মাজার এবং ভাস্কর্য ভাঙার মতো ঘটনা। বকেয়া বেতনের দাবীতে যখন গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন করে তার উপর পুলিশ গুলি চালাই। আমরা আরও দেখেছি উপার্জনের রাস্তা তৈরী না করে ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত। তার মধ্যে দ্রব্যমূল্যর উর্ধগতি মানুষকে বিষন্ন করে তুলেছে।’
বক্তারা আরও বলেন, প্রশাসনের নীরবতায় উগ্রবাদীদেদর আস্ফালন বেড়ে গেছে, তারা দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাই। তাদের এই উগ্রবাদীতাকে কাজে লাগিয়ে ভারত সরকার ঐ দেশের সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করতে চাই। তারা বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা করে দুই দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করে বিদেশিদের সাথে ষড়যন্ত্র করতে চাই।
আমরা দেশের জনগণকে সজাগ থাকার ও কোন সাম্প্রদায়িক উস্কানির ফাঁদে পা না দেয়ার আহবান জানাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
আমরা ভারতের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান চাই। আমরা এই সমাবেশ থেকে বলতে চাই, ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথে চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং রামপালসহ জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে।সীমান্তে হত্যা বন্ধ, তিস্তাসহ ৫৪ টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে আন্তর্জাতিকভাবে জনমত সংগঠিত করতে হবে।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বক্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন কলেজে ঘোষণা দিয়ে মারমারি হয়েছে শিক্ষার্থীদের নামে মামলা হয়েছে কলেজ লুটপাট ও ভাংচুর এর কারণে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আমরা দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই। আমরা দেখেছি সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেফতার পরবর্তি আদালত প্রাঙ্গণে প্রশাসনের সঠিক ভূমিকা না থাকায় সহিংসতার মাধ্যমে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়। আমরা এই হত্যার সুষ্ঠ বিচার চাই। পাশাপাশি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবীকে আদালতে যেতে না দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
যে কোন ব্যক্তির ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে। উক্ত ঘটনায় তা লঙ্ঘিত হয়েছে। এ বিষয়েও সরকারের পদক্ষেপ জরুরী। চিন্ময় দাসের গ্রেফতারের পুরো বিষয় সরকারের দিক থেকে স্পষ্ট করতে হবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এলাকা,উপসনালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থ ভূমিকা দৃশ্যমান হওয়ায় আমরা সরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বিটাক মোড় থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাগরিকা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।