চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের দোহাজারী হাইওয়ে থানা-সংলগ্ন সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা কলোনি উচ্ছেদ এবং ওই কলোনিতে চলমান জুয়া ও মাদক ব্যবসা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের অন্তর্গত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিওসির মোড় এলাকায় কালিয়াইশ ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে এ মানববন্ধন পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দোহাজারী হাইওয়ে থানা-সংলগ্ন সাঙ্গু নদীর পাড়ে কয়েক বছর আগে এলাকার প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় অবৈধভাবে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠেছে। এতে সহযোগিতা করেছে পুলিশ প্রশাসন। ওই প্রভাবশালীরা রোহিঙ্গাদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের পাশাপাশি রাত-দিন চালাচ্ছে জুয়ার আসর ও জমজমাট মাদকের ব্যবসা। এ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কালিয়াইশ ইউনিয়নের গণ্ডি পেরিয়ে সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, টেকনাফের উখিয়া ও কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে খুনসহ নানা ধরনের অপরাধ করে অপরাধীরা আশ্রয় নিচ্ছে কালিয়াইশের এই রোহিঙ্গা বসতিতে থাকা তাদের স্বজনদের কাছে। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতরা অনেক সময় খুন, চুরি, ছিনতাইসহ বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে নির্দ্বিধায়। এ ব্যাপারে প্রশাসন অবগত হলেও এত দিন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
মানববন্ধনের নেতৃত্বদানকারী আফিল উদ্দিন বলেন, ‘কালিয়াইশ ইউনিয়নে মাদক, জুয়া, চুরি, অসামাজিক কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এক দশক ধরে ঘটলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে ভেতরে ভেতরে প্রতিবাদ করলেও এত দিন কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি। প্রশাসন আমাদের কথা শুনেনি এবং কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। কালিয়াইশবাসী নিরাপদে বসবাস করতে ভবিষ্যতে নিজেরাই অপরাধ প্রতিরোধে মাঠে নামতে বাধ্য হবে।’ আগামী দিনে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে এ ক্ষুদ্র আন্দোলন বৃহৎ হয়ে পুরো সাতকানিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ঘণ্টাব্যাপী চলা এ মানববন্ধনে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ব্যক্তি, স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, ‘দোহাজারী হাইওয়ে থানার পাশেই রোহিঙ্গা কলোনিটি অবস্থিত। মহাসড়কে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার শিকার যানবাহনগুলো উদ্ধার করে আমরা থানার মাঠেই রাখি। সেখান থেকে মাঝে মধ্যে যানবাহনের যন্ত্রাংশ চুরি হয়। আমাদের ধারণা রোহিঙ্গা কলোনিতে বসবাসরত লোকজন ওই কাজের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট থানাকে মৌখিকভাবে অবগত করে রেখেছি।’
সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত বলেন, ‘সব ধরনের অপরাধ নির্মূলে সাতকানিয়া থানা বদ্ধপরিকর। সাঙ্গু নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা কলোনি থেকে মাদক নির্মূলে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় সোর্সের দেওয়া তথ্য ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সময় মাদকদ্রব্যসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘সম্প্রতি ওই রোহিঙ্গা কলোনিতে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ একজনকে আটক করে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা কলোনিটি উচ্ছেদের বিষয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’