চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে নাবালিকা শ্যালিকাকে নির্মমভাবে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. শাহ পরানকে (৩২) দীর্ঘ ১৩ বছর পর রাউজান হতে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া এলাকা থেকে শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মোঃ শাহপরান ফটিকছড়ির ভুজপুরের পূর্ব হাসনাবাদের নূর মোহাম্মদের পুত্র।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক নুরুল আবছার বলেন, ১৩ বছর আগে ফটিকছড়িতে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শাহ পরানকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারি এবং ছায়াতদন্ত করছিলো র্যাব। এরমধ্যে গোপন সূত্রে জানতে পারি, এই আসামি গ্রেপ্তার এড়াতে রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া এলাকায় অবস্থান করছে। পরে র্যাবের অভিযানিক দল গতকাল (২৬ মে ) অভিযান চালিয়ে শাহ পরানকে আটক করে। পরে তাকে রাউজান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
জানা যায়, আসামি মো. শাহ পরান এবং নিহত ভিকটিমের বড় বোন দেলোয়ারা বেগম ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর হতে শাহ পরান তাদের সংসারের অভাব অনটন এবং পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করতো। দেলোয়ারা বেগম স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি শাহ পরান দেলোয়ারা বেগমকে বিভিন্ন সময় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিত।
এরমধ্যে ২০১০ সালের ১লা এপ্রিল দেলোয়ারা বেগম ও তার ১০ বছর বয়সী ছোট বোন ফারহানা ইয়াছমিন রিকা মনি খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লে রাত আনুমানিক ৪ টায় আসামি শাহপরান তার ভগ্নিপতি নাসিমকে নিয়ে দেলোয়ারা বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে শাহপরান ঘুমন্ত দেলোয়ারা বেগমের বুকের ডান পাশে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। এসময় দেলোয়ারা বেগমের চিৎকারে তার মা এবং ছোট বোন ফারহানা ইয়াছমিন ঘুম থেকে জেগে আসামিদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে আসামি শাহপরান তার হাতে থাকা ছোরা দ্বারা ফারহানার পেটে নির্মমভাবে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে।
এতে ভিকটিম ফারহানার নাড়িভূরি বের হয়ে আসে এবং ঘটনাস্থলেই সে মৃত্যুবরণ করে। এ সময় ভিকটিমের মায়ের চিৎকারে তার ভাই এবং প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা ছোরা ও একটি ব্লেড ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত দেলোয়ারা বেগমকে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হতে চট্টগ্রাম জেলার ভুজপুর থানায় দুই জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা চলাকালীন সময়ে আসামি শাহ পরান আদালতের নিকট হতে জামিন নিয়ে পলাতক হয়। দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় ও কোর্টে হাজিরা না দেওয়ার আসামির অনুপস্থিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ২০১৯ সালের ৯ই এপ্রিল তারিখে আসামি শাহপরানকে মৃত্যুদণ্ড সাজা প্রদান করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।