শফিউল আলম, রাউজান ঃএকসময় আমাদের দেশে একটি প্রবাদ ছিল মা ভাতে বাঙালী। এখন সেই প্রবাদ আর নেই। সেসময় খাল-বিলে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছ পাওয়া যেত। বিল- খালে মাছগুলো খেতে সুস্বাদু ছিল।এখন দেশীয় সুস্বাদু মাছ খাল-বিলে তেমন একটি পাওয়া যায় না। প্রায় বিলুপ্তের পথে। বিলুপ্ত হওয়া মাছের মধ্যে রয়েছে, কই, মাগুর, শৈল, বোয়াল, পুটি, শিং, ট্যাংরা, পূঁই, গুইলদা, ভেদা, বাইন, পুইয়া, টাঙ্গি, বাস,ঢেলা, পাবদা, দাড়কানা, মোয়া, কৈ, রয়না, গোরপে, তিন কাঁটা আইড়, তেলটুপি,গাড্ডু টাকি, ভেদা, মাগুড়,বড় শৈল প্রভৃতি,ইদানীং পুঁটি, জাতটাকি, কাকিলা, খৈইলসাসহ বিভিন্ন দেশীয় খাল-বিলের মাছগুলোও হাটবাজারে তেমন চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে পাওয়া গেলেও দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।খাল-বিল, গর্ত-ডোবা ইত্যাদি দিন দিন ভরাট করার কারণে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হারিয়ে গেছে।বর্তমান নতুন প্রজন্মরা বিল খালের মাছগুলো খাওয়াতো দূরের কথা নামও শুনেনি অনেকেই।
বর্তমানে খাল-বিলের মাছের পরিবর্তনে বড় বড় মাছের প্রজেক্ট- দিঘি, পুকুর,জলাশয় হচ্ছে মাছ চাষ। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে দেশের হাজারো মানুষ করেছে মাছ চাষ।রাউজানের ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের বড়-ছোট ৫ হাজার ৪০৩টি দিঘি, পুকুর ও জলাশয় হচ্ছে মাছ চাষ। এই উপজেলায় প্রতি বছর ৫ হাজার ৩৬৮ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য অফিস। উপজেলার সেরা মাছ চাষি ইয়াছিন নগর গ্রামের আব্দুল খালেক সওদাগর জানান, ওসমান, বাচাঁ মিয়া সহ তিন জন মিলে ৩০ একর আয়তন ৮টি পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগাল, কালি বাউস, চিতল, তেলাপিয়া, মাছ চাষ করে।প্রতি বছরে মাছ বিক্রি করে অর্ধকোটি টাকা আয় হয়। মৎস চাষে কৃষি ব্যাংক থেকে প্রনোদনা হিসাবে ৪ শতাংশ সুদে ঋন দওয়া হয় । ঋনের টাকা নিয়ে প্রতি লাখে ভ্যাট ও বিািভন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে এক লাখা টাকা ঋন নিতে ১২হাজার টাকা গশ্চা দিতে হয় । বর্তমানে মৎস চাষীদের কাছ থেকে ঋন নেওয়ার পর ৪শতাংশ সুদের পরিবর্তে কৃষি ব্যাংক আমির হাট ও রাউজান শাখায় ১১ থেকে ১২ শতাংশ সুদ আদায় করছে । গত ২০১৪ সাল থেকে খালেক সওদাগর মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল মৎস চাষি। দুই বার উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মৎস্য চাষে সেরা পুরষ্কার পায় তিনি। রাউজানের এযাসিন নগর এরাকার মাছ চাষী আবদুল খালেক সওদাগরের পুত্য আজগর হোসেন টিপু বাড়ীর পাশে ১২ একর আয়তনের মৎস প্রকল্পে মাছ চাষ করছেন । আজগর হোসেন টিুপ বলেন, ১২ একর আয়তনের মৎস প্রকল্পে রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, বিগ্রেড, পাংগাস মাছ রয়েছে । মাছ গুলো বড় হয়েছে । রমজান মাসে জাল দিয়ে মাছ ধরে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে ও মাছের আড়তে বিক্রয় করা হবে । উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাউজানে ৫হাজার ৪শ৩ টি পুকুর- দিঘি ও বড় বড় মাছের প্রকল্পে যে পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়, এই উপজেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে রাউজানের বাহিরেমাছের আড়ত ও বাজারে বিক্রয় করে আসছে । এটি এখন বাংলাদেশের বড় শিল্প পরিণত হয়েছে। তিনি আরো জানান, উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে খালেক সওদাগর, বাচাঁ মিয়া, উসমানসহ বেশি কয়েকজন মিলে আলাদা আলাদা পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ শুরু করেন। এরমধ্যে খালেক সওদাগর অল্প সময়েই মাছ চাষে সফলতা অর্জন করে তাক লাগিয়ে দেয়। তাঁর সফলতা দেখে উপজেলার অনেকেই মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে মৎস্য অফিসারের পরামর্শ নিয়ে মাছ চাষের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
রাউজানে পুকুর-জলাশয় মৎস প্রকল্পে ৫৩৬৮ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন
সংবাদটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন
একটি মন্তব্য করুন