শফিউল আলম, রাউজান ঃ প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে ডিম ছাড়ার মৌসুমে প্রতিদিন চলছে নদী থেকে বালু উত্তোলন ও মাছ শিকার । হালদা নদীতে মা মাছের প্রজনন রক্ষায় গত জুলাই থেকে এপর্যন্ত সময়ে রাউজান উপজেলা প্রশাসন, হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন, মৎস অধিদপ্তর, নৌপুলিশ ৬৫ হাজার মিটার দৈর্ঘ মাছ ধরার জাল উদ্বার করেন।
মাছ ধরার সাথে জড়িতদের ধরে জরিমানা আদায় করা হয় । অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান জাল উদ্বার ও জরিমানা আদায় করা হলে ও হালদায় বন্দ্ব হয়নি মাছ শিকার, বন্দ্ব হয়নি বালু উত্তোলন। হালদা নদীর মোহনা কালুর ঘাট থেকে শুরু করে রাউজানের কচুখাইন, মোকামী পাড়া, সার্কদা, মইশকরম, উরকিরচর. আবুর খীল, মগদাই, আজিমের ঘাট, কাগতিয়া, কাসেম নগর, গোলজার পাড়া, পশ্চিম বিনাজুরী, মোবারক খীল জামতল, দক্ষিন গহিরা, অংকুরী ঘোনা, বদুর ঘোনা, কোতোয়ালী ঘোনা, কাজী পাড়া, ইন্দিরা ঘাট, পশ্চিম ফতেহ নগর, হাটহাজারীর মাদ্রীসা, দক্ষিন মাদ্রসা, বাড়ীঘোনা, আমতোয়া, মাছুয়া ঘোনা, গড়দুয়ারা, মেখল, নগরীর চান্দগাও এলাকার মোহরা এলাকা সমুহে রাতেই নদীতে জাল বসিয়ে ও বড়শী দিয়ে মাছ শিকার করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সদস্যরা । কালুর ঘাট হালদা নদীর মোহনা থেকে রাউজানের কচুখাইন এলাকায় নদীতে ভাটার সময়ে টেংরা জাল দিয়ে চিংড়ি পোনা আহরন করেন প্রতিনিয়ত।
চিংড়ি পোনা আহরনকারীদের কাছ থেকে কালুর ঘাট ও কচুখাইন এলাকার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সদস্যরা আহরিত চিংড়ি পোনা ক্রয় করে নিয়ে যায় । প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সদস্যরা চিংড়ি পোনা আহরনকারীদের কাছ থেকে ক্রয় করে বেশ দামে চিংড়ি মাছের চাষাবাদের প্রকল্পের মালিক, পুকুর জলাশয় মালিকদের কাছে বিক্রয় করেন। গত ৮ এপ্রিল রাউজান উপজেলা সহকারী কমিণরার ভুমি অংছিং মারমার নেতৃত্বে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার আলমগীর হোসেন সহ নৌপুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে হালদা নদীর মোহনা থেকে ৩ মৎস শিকারীকে আটক করে। এসময়ে ৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ৩ হাজার মিটার ঘের জাল উদ্বার করেন ।
মৎস শিকারের সময়ে আটক তিন মৎস শিকারীর কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। উদ্বার করা জাল আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। উদ্বার করা জালের মুল্য ২লাখ ৬০ হাজার টাকা বলে জানান, রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার আলমগীর হোসেন। রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার আলমগীর হোসেন আরো বলেন, জুলাই থেকে এপর্যন্ত সময়ে হালদা নদীতে ৫৮ টি অভিযানে ৬৫ হাজার মিটার জাল উদ্বার করে ধংস করা হয়েছে । অবৈধভাবে নদী থেকে মাছ শিকার করার অপরাধে নদীতে মাছ শিকারীকে ধরে জরিমানা আদায় করা হয়েছে । হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন রক্ষায় অভিযান অব্যাহত থাকবে ।
চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত সময়ে হালদা নদীতে রুই, কাতলা, রুই, মৃগেল ও কালিবাউশ মাছ ডিম ছাড়ে । মৌসুমের শুরুতেই হালদা নদীতে প্রচুর পরিমান মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে বলে হালদা নদীর তীরবর্তী এলাকার লোকজন জানান । হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে হালদা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ব করা হয় । হালদা নদীর নাজির হাট থেকে কালুর ঘাট পর্যন্ত নদীতে সারা বৎসর মাছ শিকার নিষিদ্ব করা হয় । হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত রাউজানের সর্তা খাল, তেলপারই খাল, সোনাইর খাল, কাগতিয়া খাল, ডোমখালী খাল, মগদাই খাল, বইজ্যাখালী খাল, উভলং খাল, হাটহাজারীর বোয়ালীয়া খাল, খন্দকিয়া খাল সহ সংযুক্ত খালে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ শিকার করা নিষ্দ্বি করা হয় । হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে নদীতে মাছের আনাগোনা দেখা গেলে ও হালদা নদীতে মাছ শিকার ও বালু উত্তোলন বন্দ্ব হয়নি।
হালদা নদীতে মাছ ছাড়ার ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার ও বালূ উত্তোলন করায় হালদা নদীতে আসা মা মাছের প্রজনন হৃাস পেয়ে আসছে । রাউজানের ডোমখালী এলাকার ডিম সংগ্রহকারী সাবেক মেম্বার আবু তাহের বলেন, একসময়ে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করতো নদী থেকে । ঐ সময়ে প্রচুর পরিমান ডিম সংগ্রহ করতো ডিম সংগ্রহকারীরা । রাউজানের ডোমখালী এলাকার ডিম সংগ্রহকারী সাবেক মেম্বার আবু তাহের আরো বলেন আমি নিজেই একটি নৌকা নিয়ে ৫০ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি একসময়ে । হালদা নদীর বাকঁ কেটে ফেলা ও হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খালগুলোতে সুইস গেইট নির্মান করার পর থেকে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে পানির শ্রোত কমে যাওয়ায় নদী ভরাট হয়ে গভীরতা কমে যাওয়ায় ও হালদা নদীর মোহনায় কচুখাইন, সার্কদা, এলাকায় নদী থেকে মা মাছ শিকার কর্নফুলী নদী ও হালদা নদীতে নেট জাল দিয়ে চিংড়ি পোনা নিধন করায় হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়া ব্যাপক ভাবে হৃাস পেয়েছে ।
রাউজানের ডোমখালী জেলে পাড়ার বাসিন্দ্বা হরিহর জলদাশ বলেন, এক সময়ে হালদা নদীতে মাছ শিকার করে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাছন্দে জীবন যাপন করেছিলাম । হালদা নদীতে মাছ শিকার নিষ্দ্বি করার পর হালদা নদীতে মাছ শিকার তো দুরের কথা হালদা নদীর পাশ্বে আমারা জেলেরা যায়না । হালদা নদীর মাছ শিকার না করে দিনমজুরের কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করছে জেলে পাড়ার বসিন্দ্বারা । হরিহর জলদাশ বলেন তাদের বাপদাদার আমলে পেশা মাছ শিকার বন্দ্ব হওয়া ছাড়া ও হালদা নদীর করাল গ্রাসে বাপদাদার বসত ভিটা নদীতে বিলিন হয়ে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অন্য জনের জমিতে বসবাস করছেন ।